কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলায় চাষাবাদ নেই মিনিকেট জাতের ধানের। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় ব্রি-উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধান সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়। আবাদ নেই মিনিকেট ধানের অথচ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকাম মিনিকেট চালের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। মোটা বিভিন্ন জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল পলিশ করে মিনিকেট নামে ব্রান্ডিং করছে মিল মালিকরা। গত সোমবার খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, মিনিকেট কিংবা নাজিরশাইল জাতের কোনো চাল নেই অথচ অন্যজাতের ধানে উৎপাদিত চাল মিনিকেট নামে ব্রান্ডিং ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, গত ২০১৯-২০ বোরো মৌসুমে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার তিন জেলাসহ ঝিনাইদহ ও মাগুরায় সর্বমোট ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৮২০ হেক্টর জমিতে মিনিকেট জাতের ধান চাষ হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমেও ঐ পাঁচ জেলার কোথাও মিনিকেট জাতের ধান চাষের কোনো তথ্য কৃষি বিভাগের কাছে নেই। মিনিকেট মূলত ইন্ডিয়ান জাত। ‘মিনিকিট’ থেকে মিনিকেট জাতের উৎপত্তি। ৯০-এর দশকে ‘মিনিকেট’ জাতের ধান বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু হলেও বর্তমানে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলায় মিনিকেট জাতের ধান চাষ হচ্ছে না বলে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র জানিয়েছে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতে অত্যন্ত উপযোগী ওটস হৃদরাগ এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতে অত্যন্ত উপযোগী ওটস অথচ কুষ্টিয়ার খাজানগর মিনিকেট চালের জন্য হয়ে উঠেছে প্রসিদ্ধ। ৫৫টি অটোরাইচ ও হাসকিংসহ প্রায় সাড়ে ৩০০ মিল নিয়ে গড়ে উঠা চালের এ মোকামে উৎপাদিত হচ্ছে হাজার হাজার টন সরু মিনিকেট চাল। বিভিন্ন জাতের ধানে উৎপাদিত চাল অটোমেটিক মেশিনে পলিশ করে মিনিকেটের নামে ব্রান্ডিং করছেন মিল মালিকরা। অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে সরু/মোটা সব ধরনের চাল পলিশ করে চাকচিক্য ও পিচ্ছিলের পাশাপাশি প্রতিমণ চালের উপরিভাগ থেকে দেড় কেজি পরিমাণ আঁশ উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে চালের ভিটামিন (বি২), পুষ্টি-শক্তি উপাদান। এছাড়া অটোমেটিক মেশিনে পলিশের কারণে চালের স্বাভাবিক অবস্থা অটুট থাকছে না। মেশিনে হোয়াইটনার ব্যবহার করে চাকচিক্য ও উজ্জ্বল্যের ফলে আসল রূপ-গন্ধ হারিয়ে চাল হচ্ছে অধিক পিচ্ছিল ও সাদাটে। দেশের জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন চাহিদা ও প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। কিন্তু উপরিভাগের আঁশ তুলে নেওয়ায় ভিটামিন ও শক্তি-পুষ্টিহীন চাল ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
এদিকে এবার ভরা আমন মৌসুমে চালের দর ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। চলতি ডিসেম্বর মাসে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার মোকামে বস্তা প্রতি পাইকারি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এতে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে গত এক মাসে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খুচরা বাজারে মিনিকেট কেজি প্রতি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭০ টাকা, কাজললতা ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা ও স্বর্ণা ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের গুণমান নিরূপণ, উৎপাদিত চালের ব্রান্ডিং যাচাইসহ নীতিমালা ও মনিটরিং অভাবে অসাধু মিল মালিকরা সুযোগ বুঝে নানা কারসাজি করছে। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মিল মালিকদের এমন কারসাজিতে ঠকছেন ভোক্তারা।
সংলাপে না যাওয়া দায়িত্বশীল কাজ নয়, বিএনপিকে কৃষিমন্ত্রী সংলাপে না যাওয়া দায়িত্বশীল কাজ নয়, বিএনপিকে কৃষিমন্ত্রী কুষ্টিয়ার অটোরাইচ মিল মালিক এবং অটো মেজর ও হাসকিং চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, আঁশ উঠিয়ে নেওয়ায় চাল থেকে ভিটামিন জাতীয় উপাদান কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। তবে ঐ আঁশ থেকে ‘রাইচ ব্রান ওয়েল’ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া চালের দর বৃদ্ধিতে কারসাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।
কুষ্টিয়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রমাণিক জানান, মিনিকেট মূলত ইন্ডিয়ান জাত। বর্ডার বেল্টে অল্প কিছু ‘মিনিকিট’ ধান চাষ করা হয়। কিন্তু কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলায় মিনিকেট জাতের ধান চাষে পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই বলে তিনি জানান।
জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার জানান, অন্যজাতের ধানে উৎপাদিত চাল মিনিকেট নামে ব্রান্ডিং ও বাজারজাত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।