প্রকৃতির নিয়ম হলো, মানুষ নানাভাবে সম্পদের মালিক হয়। কখনো নিজের হাতে, কখনো উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু সম্পদ থাকে। কিন্তু মালিকানাধীন সম্পদে নিজের ভোগাধিকার আসলে কতটুকু এ বিষয়ে হাদিসে খুবই যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা এসেছে। মুতাররিফ (রা.)-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবী (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি সুরা আত-তাকাসুর পাঠ করছিলেন। তিনি বলেন, আদম সন্তানরা বলে, আমার সম্পদ আমার সম্পদ। বস্তুত হে আদম সন্তান, তোমার সম্পদ সেটা, যা তুমি খেয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছ, পরিধান করে পুরনো করে ফেলেছ এবং দান করে খরচ করেছ। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩১০) হাদিসটি অন্য ভাষ্যেও বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ বলে, আমার সম্পদ আমার সম্পদ। অথচ তিনটিই হলো তার সম্পদ, যা সে খেয়ে নিঃশেষ করে দিল। অথবা যা সে পরিধান করে পুরনো করে দিল। কিংবা যা সে দান করল এবং সঞ্চয় করল। এ ছাড়া অবশিষ্টগুলো তার থেকে চলে যাবে এবং তা মানুষের জন্য রেখে যেতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩১২) কাজেই কোনো মানুষ অর্জিত সম্পদের পুরোটা ভোগ করতে পারে না। মালিকানাধীন সম্পদে নিজের ভোগাধিকার খুব সামান্যই।
সম্পদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদির দিক থেকে মানুষ চার ধরনের। আবু কাবাশা আনসারি (রহ.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া চার শ্রেণির মানুষের জন্য। তারা হলো:
১. আল্লাহ যে বান্দাকে সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে (সম্পদ আয় ও ব্যয় করার ক্ষেত্রে) প্রতিপালককে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, সে তাতে আল্লাহর অধিকার স্বীকার করে। এটাই সর্বোত্তম স্তর।
২. যে বান্দাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু সম্পদ দান করেননি। তবে তার নিয়ত পরিশুদ্ধ। ফলে সে বলে, যদি আমার সম্পদ থাকত তবে আমি অমুক কাজ করতাম। তাকে তার নিয়ত অনুসারে সাওয়াব দেওয়া হবে। প্রতিদান লাভে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির মতো। অর্থাৎ দান-সদকা ও আর্থিক ইবাদত করতে না পারলেও আল্লাহ তাকে সাওয়াব দিয়ে দেবেন।
৩. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন; কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। ফলে সে জ্ঞানহীন অবস্থায় সম্পদ ব্যয় করে। সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না এবং তাতে আল্লাহর অধিকার আছে তাও সে জানে না। এই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট।
৪. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ জ্ঞানও দেননি এবং সম্পদও দেননি। সে বলে, আমার সম্পদ থাকলে আমি অমুক ব্যক্তির তথা তৃতীয়জনের মতো (পাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুসারে প্রতিদান পাবে এবং তাদের উভয়ের পরিণতি একই রকম হবে। অর্থাৎ মন্দ কাজ না করেও সে পাপের ভাগীদার হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩২৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২২৮)