লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশ হেফাজতে নিহত হিমাংশু বর্মণ(৩৫) ও তার বাবার কাছে এক লাখ টাকা পুলিশ দাবি করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার। আর সেই টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন হিমাশুর বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণ। তাই ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেছেন তিনি। একই দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরাও। শনিবার (৮জানুয়ারী) বিকেলে নিহত হিমাংশুর বাড়ি উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পুর্ব কাদমা গ্রামে গেলে তার বাবা বিশ্বেশ্বর ও এলাকাবাসী এমন অভিযোগ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে হিমাংশুর স্ত্রী সাবিত্রী রানী নিজ বাড়িতে খুন হয়েছেন বলে জানতে পারেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে হিমাংশুকে তার স্ত্রীর মরদেহর পাশে দেখতে পান। পরে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলমসহ একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে ওই লাশসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে পিংকীকে(১৩) থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু সেই হিমাংশু যে, থানায় গিয়ে লাশ হবেন? তা মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ দাবি করছে হিমাংশু আত্মহত্যা করেছে! কিন্তু সে যদি আত্মহত্যা কিংবা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো। তাহলে সে বাড়িতেই করলো না কেন”? তাদের দাবি হিমাংশু আত্মহত্যা করে নাই, পুলিশ নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। সুষ্টু তদন্ত হলে সব সত্য ঘটনা প্রকাশ পাবে বলে ধারণা তাদের। তবে শুধু এলাকাবাসী নয়, পরিবারের লোকজনও দাবি করেছেন হিমাংশুকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণের ভাষ্য মতে, ‘শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে থানায় দেখতে গেলে পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারলে ছেলে ও নাতনী পিংকীকে ছেড়ে দেওয়া হবে নতুবা তাদেরকে জেলে পাঠানো হবে বলে উল্লেখ করেন বিশ্বেশ্বর বর্মণ। তিনি আরও জানান, থানা থেকে ফেরার আগে ওইদিন বেলা দেড়টার দিকে হিমাংশুর সাথে সর্বশেষ দেখা করেন বাবা বিশ্বেশ্ব বর্মণ। ওই সময় হিমাংশু তার বাবাকে বলেন, ‘বাবা পুলিশ আমার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা দিলে ছেড়ে দিবে, না দিলে আমাকে ও আমার মেয়েকে জেলে পাঠিয়ে দিবে”। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণ। তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টা ভিত্তিহীন দাবি করে হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, ‘হিমাংশু থানার কক্ষে থাকা ওয়াই-ফাই এর তার গলায় পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে”। এলাকাবাসী সন্তোষ কুমার রায় জানান আমরা ভালো সুস্থ মানুষকে পুলিশভ্যানে উঠায়ে দিলাম পরে বিকেলে শুনি তার মৃত্যু হয়েছে এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। প্রশাসনের ঘরে তার মৃত্যু হবে আমরা হতবাক হয়ে গেছি। এঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি। শুক্রবার রাত ১১টায় হাতীবান্ধা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সামিউল আমিন নির্দেশে হিমাংশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাটে মরদেহ পাঠান পুলিশ। শুক্রবার রাত ৯টার লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা থানার কক্ষে হিমাংশুর আত্মহত্যার করে বলে একটি প্রেস রিলিজ প্রদান করেন। হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হিরন্ময় বর্মণ বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে পুলিশ হিমাংশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার গলায় একটি দাগ রয়েছে”।