কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন মাঠে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তার অভিযোগ, ‘নির্বাচনি এজেন্ট ও যারা আমার সমর্থনে কাজ করছেন তাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে। বিদেশি দূতাবাসে যারা আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনারা নির্বাচনের দিন মাঠে থাকেন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কিল্লারপুর এলাকায় প্রচারণা চালান তৈমুর আলম খন্দকার। প্রচারণা চলাকালে তিনি এ কথা বলেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তৈমুর আলম বলেন, ‘আমার দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করা না হলে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট হবে। গত কয়েকদিনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলে মানুষের মানসিক অবস্থা কী দাঁড়ায়?’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশ সুপার উদ্দেশে এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে হয়রানি বন্ধ করুন। ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ নষ্ট করবেন না। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করবেন না।’ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন আমার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি: তৈমূর
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন- এমন একটি গুঞ্জন ছিল বুধবার দিনভর। তবে দিনশেষে এ গুঞ্জনে পানি ঢেলে দিয়েছেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে তৈমূর আলম বলেন, ‘এটি সত্য নয়, কিছু গুটিবাজ, খারাপ লোক অপপ্রচার করছে।’
তৈমূর আলমের কর্মী-সমর্থকদের দাবি, নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষের লোকজন এ গুজব ছড়াচ্ছে। এটি প্রতিপক্ষ প্রার্থীর অপপ্রচার। ভোটের মাঠে তৈমূর আলমের অবস্থান ভালো হওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াতে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছু গুটিবাজ, খারাপ লোক,….. (ভাষা প্রকাশ যোগ্য নয়) এ অপপ্রচার করছে। আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। ভোটাররা আমার সঙ্গে আছে।’ একপর্যায়ে তৈমূর আলম খন্দকার কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যান। তৈমূর আলমের নির্বাচন সমন্বয়ক এস এম আকরাম বলেন, ‘তৈমূরের জেতার সম্ভাবনা জেগে ওঠায় নৌকার কর্মীরা এ গুজব ছড়াচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল অবশ্য তৈমূরকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে, তবে জনগণ তৈমূরকে সমর্থন করছে, পাশে আছে। তাই সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রচার প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমরা জয়ের ব্যাপার আত্মবিশ্বাসী।’
গত সোমবার এক নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, চমক আছে।’ তার এই ‘চমক’ তৈমূরের বসে যাওয়াকে ইঙ্গিত করছে বলে অনেকের ধারণা।
আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, ‘আমার ধারণা হাতি মার্কার প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। তৈমূর এখন একটি অজুহাত খোঁজার জোর চেষ্টা করছেন।’
এদিকে নাসিক নির্বাচনে দুই প্রার্থীই শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এই অহিংস প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত দুই প্রার্থী নিজ-নিজ প্রচারণা চালাচ্ছে। কেউ কাউকে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেয়নি। এটি একটি পজিটিভ ব্যাপার। আর এই অহিংস প্রচারণায় সিটি ভোট উপলক্ষে এখন উৎসব বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরে মোটামুটি সব মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীর মাইক বাজছে। শহরজুড়ে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারও ছড়িয়ে আছে। কারও মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই।
সাধারণ বাসিন্দারা বলছেন, নৌকার প্রার্থী আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এখন পর্যন্ত প্রচারণায় সংযত রয়েছেন। সব প্রার্থীই অহিংসভাবে প্রচার চালাচ্ছেন, ফলে নির্বাচন নিয়ে আমাদের এখানে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। আমরা আশাবাদী, ভোটের দিন পর্যন্ত এ পরিবেশ বজায় থাকবে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রাফিউর রাব্বী বলেন, নৌকার প্রার্থী আইভী ও হাতির প্রার্থী তৈমূরের প্রচারণায় এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেন, ১৬ জানুয়ারির ভোটের দিনও উৎসব বিরাজ করবে। কোনো সহিংসতা ঘটবে না। তিনি বলেন, আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে সরকার ও আইভী সবাই বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে।