মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

৬ মাসে ৮২ কারখানায় আগুনে ১২৮ মৃত্যু

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২

সিপিডি-ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিবেদন
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতের বাইরে অন্য খাতগুলোর কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। নিরাপত্তার অভাবের অন্যতম কারণ হলো অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বিনিয়োগে আগ্রহী নন উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে অন্যান্য খাতের কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ৬ মাসে ৮২টি কারখানায় আগুন লেগেছে, যাতে মৃত্যু হয়েছে ১২৮ জনের। এতে দগ্ধ বা আহত হন ২৮৩ জন। সে হিসেবে প্রতি ২ দিনে একটি দুঘর্টনা ঘটেছে। এসব দুঘর্টনা ঘটেছে ঢাকা ও ঢাকার আশে পাশে। তবে বেশির ভাগই ঘটেছে ঢাকাতে।
সিপিডি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন। খ্রিশ্চিয়ান এইডকে সঙ্গে নিয়ে গবেষণাটি করে সিপিডি। এর বিস্তারিত তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পোশাক খাতের বাইরে অন্য খাতগুলোর কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিল্পে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। নিরাপত্তার অভাবের অন্যতম কারণ হলো অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বিনিয়োগে আগ্রহী নন উদ্যোক্তারা।’ সিপিডি মনে করে, এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, অগ্নিদুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ২৯টি ঘটেছে ঢাকায়। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে ১০টি, গাজীপুরে আটটি এবং চট্টগ্রামে আটটি দুর্ঘটনা ঘটছে। সিপিডি বলেছে, গত বছরের অক্টোবরে শিল্প খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু সে উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অগ্নি দুর্ঘটনার চিত্র খুবই উদ্ধেগজনক। এই দুর্ঘটনাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। গবেষণায় বলা হচ্ছে, মূলত হাসপাতাল, শপিংমল এবং শিল্পকারখানায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৬৩ শতাংশ দুঘর্টনাই অগ্নি সংক্রান্ত। সিপিডি মনে করে, দুর্ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে শিল্পখাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন।
কলকারখানায় নিরপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা গত বছরের অক্টোবরে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। এই উদ্যোগগুলো যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য নাগরিক সমাজের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সিপিডি বলেছে, এটি নাগরিক সমাজের দায়িত্ব। যেসব উদ্যোগ বিডা নিয়েছে, সেগুলো যাতে সময় মতো বাস্তবায়ন করতে পারে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে নাগরিক সমাজকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের বাইরেও অন্যান্য খাতগুলো বর্ধনশীল। দুই দশক আগে পোশক শিল্পের বহির্ভূত কারখানার সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার।’
এফবিসিসিআই ৩২টি খাতে ৪২ হাজার প্রতিষ্ঠানকে চিহিৃত করেছে। এর মধ্যে সবচেয় বেশি শিল্প কারখানা হচ্ছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছে ইটভাটা, টেক্সটাইল,হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদি। এসব খাত ধীরে ধীরে বাড়ছে। সিপিডি বলেছে, এদের বড় একটি অংশের কোনো নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন না হলেও এই কারখানাগুলো রপ্তানিমুখীর দিকে যাচ্ছে।
খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, ‘গত বছর খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে রপ্তানি একশ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতে রপ্তানি বাড়ছে। চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, পাট, হালকা প্রকৌশলী, প্লাস্টিক শিল্পে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব খাতে রপ্তানি বাড়াতে হলে নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে।’
গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাকের বাইরে ৪২ শতাংশ কারখানায় কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। মাত্র ৯ শতাংশ কারখানায় সেইফটি কমিটি আছে। এসব কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঘাটতি সহ বড় রকমের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়ে গেছে। সিপিডি বলেছে, এসব কারখানায় দুঘর্টনার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিছু কিছু খাতে দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি হচ্ছে। যে পরিমাণ দুর্ঘটনা হয় তার ৬৪ শতাংশ মোকাবিলায় করতে পারে ফায়র সার্ভিস বিভাগ। বাকি এক তৃতীয়াংশ মোকাবিলা করতে পারে না। শতভাগ দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মতো ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নেই বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। অগ্নি নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শপিংমল। তার পর রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
সিপিডি বলেছে, শুধু শিল্প কারখানা নয়, বরং এর বাইরে যে সব প্রতিষ্ঠানে বেশি লোকের সমাগম থাকে সে সব জায়গায় নিরপত্তা জোরদার করতে হবে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী দিনে শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য অগ্নিদুর্ঘটনা একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। শিল্পকারখানায় যে ভাবে পরির্দশন দরকার সে অনুযায়ী হচ্ছে না। নিরপত্তার জন্য পরিদর্শন আরও বাড়াতে হবে। শিপব্লিডিং চা, প্রিন্ট্রিং শিল্পে পরিদর্শন হয় না বললেই চলে। অথচ, এসব খাতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি।’ গবেষণায় বলা হয়, অনেক খাতে পরিদর্শন হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিদর্শন হলেও তা কার্যকর নয়। ফলোআপ পরিদর্শন একেবারেই হয় না। পোশাক খাতের বাইরে শিল্প কারখানাগুলোতে তুলনামূলক কম হলেও শিশু শ্রম রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানা পরিদর্শনের জন্য বিডার নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাদের কাজের অগ্রগতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। ৫ হাজার কারখানার মধ্যে মাত্র ৮৭৫টি কারখানা পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকাতে সবচেয়ে কম পরিদর্শন হয়েছে । অথচ, এখানে কারখানা ও অবকাঠামো সুবিধা অন্যান্য শহরের তুলনায় বেশি রয়েছে । ঢাকাসহ সারাদেশের কারখানা পরিদর্শন দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত বলে মনে করে সিপিডি। নিরাপত্তা প্রশ্নে বিডার যে উদ্যোগ, তাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। সিপিডি মনে করে, বাংলাশে শুধু তৈরি পোশাক খাতের দেশ নয়। এর বাইরে আরও অনেক খাত আছে,যেগুলো ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তজার্তিক বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিপিডি বলছে, সেই বাস্তবতায় এসব কারখানার কর্ম-পরিবেশের নিরাপত্তা বিধান করা গুরুত্বপূর্ণ। কর্ম-পরিবেশ নির্বিঘœ ও ঝুঁকিমুক্ত না করতে পারলে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যাবে না। কলকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com