গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও উপজেলার বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের জামাইদের পৌষ সংক্রান্ত মিলন মেলা হয়েছে। মূলত এটা পৌষ সংক্রান্ত জামাই মিলন মেলা, কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। এ মেলায় চলে জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত (দিনব্যাপী) এখানে চলে নানা রকম আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসীসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন। বিনিরাইল, কাপাইস, জাংগালীয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর, জামালপুর এর আশপাশে গ্রামসহ যারা এসব এলাকায় বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। তাছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। এ মেলায় যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন দেশীয়মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ দেখার জন্য। পৌষ মাসের শেষে দিন শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিলন মেলা তথা মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। মেলায় উপজেলাবাসী ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় প্রায় ৮ শতাাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছসহ আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। এ মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়ে থাকে নানা রকমের দেশী মাছও। পৌষ মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫৩ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। আরো জানান, মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স¦ীকৃত। মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তিনি আরো জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও, বর্তমানে এটা সকল ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যর উৎসবে পরিনত হয়েছে।