মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

পরিবার : আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের অনুষঙ্গ

আবিদা আমাতুল্লাহ:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২২

প্রবাদে আছে, ‘পরিবারের দিকে খেয়াল দাও, দেখবে সমাজ আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যাবে।’ ইসলামী সমাজের যে স্বপ্ন আমরা দেখি তার বাস্তবায়ন করতে হলে পরিবারে ইসলাম চর্চার দিকে আমাদের গুরুত্বারোপ করতে হবে সবচেয়ে বেশি। পরিবার হচ্ছে সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তি ও প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। যে পরিবার ইসলামী ভাবধারা, ইসলামী নীতিমালা ও ইসলামী বিধিবিধানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং পরিচালিত হয় তাকে ইসলামী পরিবার বলে। একটি আদর্শ পরিবারের সব উপাদানই ইসলামে বিদ্যমান। পরিবার একটি জবাবদিহিতামূলক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। মুসলিম পরিবারে সবার কাজকর্মের, অধিকার ও কর্তব্যের যেমন পরিবারে জবাবদিহি করতে হয়, তেমনি আল্লাহর কাছেও এর জন্য জবাবদিহি করতে হয়।
এ ছাড়াও একটি মুসলিম পরিবারে সব রকম মানবীয় গুণাবলির প্রশিক্ষণ হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত হয়। যার প্রভাব পরিবারের বাইরেও অন্যান্য সামাজিক সম্পর্কের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। পারস্পারিক প্রীতি-ভালোবাসা, দয়া-সহানুভূতিসহ অন্যান্য উৎকৃষ্ট সব গুণের চর্চা মুসলিম পরিবারে এনে দেয় প্রশান্তির ঝরনাধারা।
বিয়ের মাধ্যমে মুসলিম পরিবারের সূচনা হয়। জীবনসঙ্গী নির্বাচন পরিবারের একটি অন্যতম অধ্যায়। বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে তাই দ্বীনদারিতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রায়রিটি দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: আত্মিক ও ঈমানের সৌন্দর্যকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেনÑ ‘নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে করোÑ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারি। তবে তুমি তার দ্বীনদারিতাকে বেশি প্রাধান্য দেবে। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (বুখারি-৫০৯০)
একইভাবে ‘যখন তোমাদের কাছে কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারি ও চরিত্র যদি তোমাদের পছন্দ হয়, তাহলে তার সাথে বিয়ে সম্পন্ন করো; অন্যথায় জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি : ১০৮৪-৮৫)
মূলকথা সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ মুসলিম পরিবার তখনই গঠিত হবে, যখন স্বামী ও স্ত্রী দু’জনই আল্লাহ ও তার রাসূলের দেখানো পথে নিজেদের জীবন পরিচালিত করবে। নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়া, স¤প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও ত্যাগ করার মানসিকতা দাম্পত্য সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ করবে। একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক পরিবারের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার অন্যতম নিয়ামক; যা পরিবারের অপর সদস্যদেরও সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। মা-বাবার উত্তম আখলাক সন্তানদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই মা-বাবা যদি ইসলাম চর্চার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও আপসহীন হন, তা হলে আশা করা যায় তাদের সন্তানরাও এ ধারা অব্যাহত রাখবে। তাদের হাত ধরেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইসলামকে চিনবে। রাসূল সা: বলেন, ‘প্রতিটি শিশু ইসলামী স্বভাবের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা মূর্তিপূজারকে পরিণত করে।’ (তিরমিজি)
মা-বাবা দ্বীনদার হলে তাদের সন্তানরাও ইসলামের সুশীতল ছায়ায় বেড়ে উঠে পরম যতেœ; কারণ সন্তানরা তারবিয়ার প্রথম পাঠ তাদের মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। মুয়াজ রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমাকে রাসূল সা: বলেন, ‘তুমি তোমার উপার্জিত সম্পদ তোমার পরিবারের জন্য সামর্থ্য অনুসারে ব্যয় করো। পরিবার পরিজনদের শিষ্টাচার শিক্ষাদানের ব্যাপারে শাসন থেকে বিরত থেকো না এবং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে পরিবারের লোকজনকে ভীতি প্রদর্শন করো।’ এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সন্তানকে আদর্শ-চরিত্রবান ও ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলতে মা-বাবার ভূমিকা অপরিসীম। সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষা থেকে শুরু করে সব রকম আচার-আচরণ শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে মা-বাবাকে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। হাদিসে এসেছেÑ ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনদের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’(বুখারি ও মুসলিম)
সমাজ-সভ্যতার ও মানবতার ভিত্তি স্তর হচ্ছে পরিবার। ইসলামী পরিবারে স্নেহ, মমতা, ভক্তি, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, সমবেদনা, উদারতা, ত্যাগ প্রভৃতি সামাজিক মানবীয় গুণাবলির প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন পরিবারের সদস্যরা তাই নৈতিক চরিত্র গঠন ও উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ পায়। মুসলিমদের প্রতিটি পরিবার প্রকৃতপক্ষে পুরো মুসলিম উম্মাহরই অংশ। তাই প্রতিটি পরিবার যদি তাদের সদস্যদের সঠিকভাবে ইসলামিক অনুশাসন মেনে গড়ে তোলে, তাহলে এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহই উপকৃত হবে। ইসলামী সমাজব্যবস্থার সূচনা মুসলিম পরিবারগুলোকে কেন্দ্র করে এভাবেই বিকাশ লাভ করবে। ইনশা আল্লাহ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com