মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

অভিযোগ : বরিশালের কির্তনখোলা নদীর চরকাউয়া খেয়াঘাট গিলে খাচ্ছে ওরা

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

বরিশাল নগরীর মধ্যে ব্যস্ততম নদী পাড়াপাড়ের খেয়াঘাটগুলোর অন্যতম লঞ্চঘাট সংলগ্ম চরকাউয়া খেয়াঘাট। এ স্থান থেকে ইঞ্জিনচালিত যাত্রীবোঝাই ট্রলারে প্রতিদিন নদী পাড়ি দিচ্ছেন (পূর্বপাড়) বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া সহ পাশ্ববতী উপজেলা বাখেরগঞ্জের ৪টি ইউনিয়ন এলাকার অর্ধলাখ মানুষ। যাত্রীদের সুবিধার জন্য সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ সেই খেয়াঘাটটি ইজারামুক্ত করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে খেয়াঘাটটি কেউ আর দেখভাল করছে না। খেয়া ঘাটটি এখন অভিভাবকহীন হয়ে আছে। খেয়াঘাটের দুই পাড়ে নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা এবং খেয়াঘাটের দুই পাড় ভাঙন রোধে ও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং মোটরসাইকেল চালকদের জিম্মি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল নগরীর বেলতলা নদীর খেয়াঘাটের চেয়ে চরকাউয়া খেয়াঘাটের দূরত্ব কম। তারপরও সেখানকার যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। চরকাউয়া খেয়াঘাটে মোটরসাইকেল পারাপারে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। অপরদিকে বেলতলা খেয়াঘাটের নদী পারাপারে দূরত্ব তুলনামূলক বেশি। সেখানে যাত্রীসহ একটি মোটরসাইকেল ২৫ টাকায় পারাপার করতে দেখা যায়। চরকাউয়া খেয়াঘাটে ট্রলার মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি এবং জোর-জুলুম করে এ ঘাটটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ ছাড়া ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে নদী পারাপারেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। চরকাউয়া খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রী শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘এই খেয়াঘাটে ইজারাদার না থাকায় নাগরিক সুবিধার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই। ২ টাকার ট্রলারর ভাড়া এখানে ৫ টাকা করে দিতে হয়। এখান থেকে বরিশাল সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ চলাফেরা করে। এ ইউনিয়নগুলোর সীমানাঘেঁষা আরও ৭টি ইউনিয়ন আছে, যেগুলো বাকেরগঞ্জ উপজেলাভুক্ত। খেয়াঘাটের চরকাউয়া প্রান্তে বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোলাসহ ৭টি রুটে বাস চলাচল করে। এসব কারণে এ খেয়াঘাটে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যাত্রী পারাপার হয়। এই খেয়া পারাপারে আমরা অনেক জোর-জুলুমের শিকার হই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন ফয়সাল নামে একজন খেয়াযাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এখান দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করি। সবাই যেমন টাকা দেয়, আমিও তেমন দেই। কার সঙ্গে ঝামেলা করবো? আমাদের এখান থেকে খেয়া পার হতে হবে। তাই ভাড়া বেশি বা কম নিলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। আমরা সারাজীবন ধরে এ অবহেলার শিকার হয়ে আসছি। খেয়া দিয়ে পার হওয়া নিয়মিত যাত্রী শহীদ বলেন, ‘প্রতিদিন এখান থেকে আমার মোটরসাইকেল পারাপার করতে হয়। তবে মোটরসাইকেল পারাপারে আদায় করা ভাড়াটি অতিরিক্ত। এ পাড় থেকে ওই পাড়ে যেতে সময় লাগে মাত্র ২ মিনিট। দূরত্ব খুব অল্প। কিন্তু তারা একটি মোটরসাইকেল পারাপার করতে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করে। এই ঘাটের মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া যাত্রী সৌরভ বলেন, ‘আমাদের নগরীর সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ ঘাটটি ইজারামুক্ত ঘোষণা করেছিলো যাত্রীদের ভালোর জন্য। কিন্তু আজ সেটা আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। একটা মোটরসাইকেল পারাপারে ৫০ টাকা করে দিতে হয়। যা অনেক বেশি। এ ছাড়া ঘাটের দুই পাড় ভাঙা, তাই আমাদের চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ট্রলারচালক জুম্মান বলেন, ‘আমি এখানে ভাড়ায় ট্রলার চালাই। প্রতিদিন ৪’শত টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আয়ের বাকি টাকা আমার থাকে। তিনি বলেন, ‘মালিক সমিতি যত টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়, আমরা যাত্রীদের কাছে থেকে সেটাই তুলি। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন যাত্রী তোলা হয়। প্রতিদিন আমাদের কমপক্ষে ২ হাজার টাকা ইনকাম হয়। তবে ট্রলারর মালিক সমিতির কাছে প্রতিদিন আরও ২০ টাকা করে দিতে হয়। ওই ২০ টাকার ১০ টাকা ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহার করা হয়। বাকি ১০ টাকা আমাদের ৩ বছর পর ফেরত দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রলারচালক বলেন, ‘আমরা ট্রলার মালিকদের ৪’শত টাকা জমা দেই ভাড়া হিসেবে। কিন্তু এর বাইরেও আমাদের প্রতিদিন ২০ টাকা করে সমিতির কাছে জমা দিতে হয়। এই টাকার হিসাব আমরা পাই না। ট্রলার চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ‘সঞ্চয়’ নামে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে কেন নেওয়া হয়, সে প্রশ্নের উত্তরে চরকাউয়া ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত বলেন, ‘এই ঘাটে প্রতিদিন ৬৫টি ট্রলার চলাচল করে। এই ট্রলার চালকদের কাছে প্রতিদিন যে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়, সে টাকার ২টি ভাগ হয়। ওই টাকার ১০টাকা হিসেবে তিনবছর পর প্রত্যেক মালিক নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। বাকি ১০ টাকা ঘাটে ট্রলার বাঁধার জন্য এবং সমিতির আনুষঙ্গিক খরচে ব্যবহার করা হয়। খেয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কথা অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খেয়ায় ২০ জনের বেশি যাত্রী তুলি না। কোনো চালক অতিরিক্ত যাত্রী তুললে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তবে বর্তমানে আমাদের খেয়া ঘাটের দুই পাড়ে যে ভাঙা আছে, সে সমস্যার সমাধান শিগগিরই হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার পাস হয়েছে। তবে কাজ আদৌ কবে শুরু হবে সে সম্পর্কে কোনো জবাব দেননি তিনি। খেয়ায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় কেন করা হয় এ প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তরও দিতে পারেননি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। এদিকে, চরকাউয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ওমর আলিকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। নগরীর বেলতলা খেয়াঘাটের ইজারাদার মোকলেস বলেন, ‘চরকাউয়া খেয়াঘাট ইজারামুক্ত করার পর শুধু যাত্রীদের ওপর নয়, খেয়া চালকদের ওপরেও জোর-জুলুম করা হয়। ট্রলার মালিক সমিতির সঙ্গে যুক্ত না হলে ওই ঘাটে কেউ ট্রলার চালাতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘বেলতলা খেয়াঘাটের চলতি ডাক ৬৪ লাখ টাকার, তবু আমরা এই ঘাটে নদীর দূরত্বের তুলনায় খুব কম ভাড়ায় যাত্রী টানি। সেখানে হিসাব করলে চরকাউয়া খেয়ায় যাত্রীদের ওপর অনেক জোর-জুলুম করা হয়। এব্যাপারে বরিশালের একাধিক সচেতন নাগরিকরা বলেন, ‘জনগণ ও খেয়া চালকদের জন্য এই ঘাটটি ইজারামুক্ত করে দিয়েছিলেন সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ। তবে ক্ষমতাবানরা এ ঘাটটি জিম্মি করে রেখেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে জনগণের ন্যায্য অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com