শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক আকারে বাড়ার আশঙ্কা গবেষকদের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দেশে গুণিতক আকারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা। গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউ’র কোভিড-১৯-এর ৭৬৯টি জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই আশঙ্কার কথা জানান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
(উল্লেখ্য, ২ অঙ্ক থেকে গুণিতক আকারে ২, ৪, ৬, ৮ এভাবে বৃদ্ধি পায়। আবার ৩ অঙ্ক থেকে গুণিতক আকারে ৩, ৯, ১২, ১৮ এভাবে বৃদ্ধি পায়)
বিএসএমএমইউ উপাচার্য জানান, তাদের সংগৃহীত নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় ২০২১ সালের জুলাই মাসে দেখা যায়, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে, আর ১ শতাংশ সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্টে। ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তারা পেয়েছেন মরিসাস বা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সে পাওয়া ডাটা অনুযায়ী, ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল-এ শনাক্ত হয় টুয়েন্টি-বি ভ্যারিয়েন্ট, যা একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত ৪০টি নমুনার ৮টিতে ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পরের মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। প্রকৃত ফল আমরা এ মাসেই আপনাদের জানাতে পারবো।’
গবেষণা প্রসঙ্গে শারফুদ্দিন জানান, এই রিপোর্ট বিএসএমএমইউ’র চলমান গবেষণার ৬ মাস ১৫ দিনের ফল। আমরা আশা করি, পরের সপ্তাহগুলোতে চলমান হালনাগাদ করা ফল জানাতে পারবো।
গবেষকরা জানান, ২০২১ সালের ২৯ জুন থেকে এ বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশের রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মোট ৭৬৯ কোডিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সী রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনও বয়সসীমাকেই কোভিড ১৯-এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ রয়েছে। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে, যেমন: ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সী রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রমিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের জেনেটিক কোডে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশিরভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রোটিনের বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।’
তিনি জানান, আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে কোনও কোনও ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল। তাছাড়া গবেষণায় তৃতীয়বারের মতো সংক্রমিত হওয়া রোগী পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগী থেকে সংগৃহীত স্যাম্পলে জিনোম সিকোয়েন্স করে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যেহেতু ওমিক্রন সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ হয়েছে, তাই হাসপাতালে ভর্তি রোগীতে ওমিক্রন না পাওয়ার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্তের বাইরে আছে বলে মনে করছি। এ সময় প্রধান গবেষক জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. লায়লা আনজুমান বানু উপস্থিত ছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com