মাসুদ রানা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দেয় সারা বিশ্বে। কিন্তু তাঁর স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন বড়ই নিভৃতচারী। দেশের রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের এই পথিকৃৎ, ভিন্ন ধারার প্রকাশনার সফল উদ্যোক্তা চিরবিদায় নিলেনও নিভৃতেই। গতকাল বুধবার ৮৫ বছর বয়সে ইন্তেকালের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর কবরস্থানে মা সাজেদা খাতুনের কবরে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্যারের মতো অমায়িক মানুষ হয় না। মাসের ৭ তারিখে সবার বেতন দিয়ে দিতেন। সেদিন শুক্রবার বা বন্ধের দিন হলে আগের দিন বেতন হতো। কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি। এখন মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটি সরে গেল কাজী আনোয়ার হোসেনের শেষ ইচ্ছা ছিল মার কবরেই থাকবেন তিনি। আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বারডেমের হিমঘর থেকে তাঁর মরদেহ ২৪/৪ কাজী মোতাহার হোসেন সড়কের বাড়িতে নেওয়া হয়। এই বাড়িটিতেই তাঁর প্রতিষ্ঠিত দেশের ভিন্নধারার প্রকাশনা সংস্থা সেবা প্রকাশনীর কার্যালয়। তৃতীয় তলায় ছিল তাঁর দপ্তর। সকালে বাড়ির সামনে বিষণ্ন মুখে অপেক্ষা করছিলেন সেবা প্রকাশনীর নানা পর্যায়ের কর্মী ও স্বজনেরা। ছেলে কাজী মায়মূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন ‘বাবা বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া না করতে। তা ছাড়া এখন করোনার সংক্রমণও বেড়েছে। সব মিলিয়েই মরদেহ শহীদ মিনার বা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়নি। তবে তিনি বলে গেছেন প্রকাশনীর কাজ আমরা যেন অব্যাহত রাখি। আমরা দুই ভাই সেই চেষ্টা করে যাব। ’গেলেন মাসুদ রানা ও কুয়াশার স্রষ্টা, সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেন। তবে পাঠকের মনে বেঁচে থাকবেন সবার প্রিয় ‘কাজী দা’।
টানা ৩২ বছর ধরে সেবা প্রকাশনীর মুদ্রণ বিভাগের কাজ করছেন কাজী ইসা। তিনি বললেন, ‘স্যারের মতো অমায়িক মানুষ হয় না। মাসের ৭ তারিখে সবার বেতন দিয়ে দিতেন। সেদিন শুক্রবার বা বন্ধের দিন হলে আগের দিন বেতন হতো। কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি। এখন মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটি সরে গেল।’ গেরিলা-৭১ নামের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হলো তাঁকে। পরিবারের সদস্য আর তাঁর অনুরাগীদেরও কেউ কেউ এলেন। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত উপস্থিতি এবং সংক্ষিপ্তভাবে সম্পন্ন করা হয় তাঁর অন্তিম বিদায় পালা।
বাদ জোহর সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজার মসজিদে কাজী আনোয়ার হোসেনের জানাজার নামাজ আদায় করা হয়। এরপর শববাহী গাড়ি যাত্রা করে বনানী গোরস্থানে। সেখানে বেলা তিনটায় তাঁকে মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। কাজী আনোয়ার হোসেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত প্রায় তিন মাস থেকে চিকিৎসার ভেতরেই ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি থেকে বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৫ সালে এবং মেয়ে শাহরিন সোনিয়া ২০১৪ সালে ইন্তেকাল করেন। দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন ও কাজী মায়মূর হোসেনসহ আত্মীয়স্বজন আর দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠককে শোকাচ্ছন্ন করে গেলেন মাসুদ রানা ও কুয়াশার স্রষ্টা, সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেন। তবে পাঠকের মনে বেঁচে থাকবেন সবার প্রিয় ‘কাজী দা’।