সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি ৮ টাকা বাড়ানোর দুই দিন পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে দেশের তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আপাতত ভোজ্যতেলের দাম আর বাড়ছে না। অথচ দুই-তিন দিন থেকে বাজারে বেশি দামের তেল সরবরাহ করছে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মেসার্স হোসেন স্টোরের মালিক শাখাওয়াত হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, গত সপ্তাহেও প্রতি ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ছিল ৭৬০ টাকা। বর্তমানে তা কোম্পানি থেকে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি লিটার তেলের দাম বেড়েছে ৮ টাকা করে। যার কারণে বাজারে খোলা তেলের দামও প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতি লিটার তেলে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অথচ এ প্রস্তাব অনুমোদন না নিয়েই তেল কোম্পানিগুলো গত ১৭ জানুয়ারি বর্ধিত দামে তেল বাজারে সরবরাহ করে। এরপর ১৯ জানুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে তেল কোম্পানির মালিক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আপাতত বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং আনুষঙ্গিক অবস্থা পর্যালোচনা করে আগামী ৬ বা ৭ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।’ তারপরও কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেল বাড়তি দামে বাজারে সরবরাহ করা প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোন অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি।’
তারপরও কেন দাম বাড়ানো হলো- জানতে চাইলে, তেল পরিশোধনকারী দেশীয় কোম্পানিগুলোর কাছে জিজ্ঞাসা করতে বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নতুন করে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রী জানে। তবে বর্তমান দাম আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করা হবে।’
এদিকে বাজারে বাড়তি দামে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহের আগেই খোলা তেলের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের সোনারগাঁও স্টোরের এক কর্মচারী বলেন, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫০-১৫২ টাকা। ২৩ জানুয়ারি থেকে তা ১৫৮-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১৪০ টাকার সুপার পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক মাস আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪০-১৪৫ টাকা। ২৩ জানুয়ারি থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। টিসিবি ন্যায্যমূল্যে ট্রাকে করে তাদের বিক্রয় কার্যক্রমেও গত মাস থেকে লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে দুই লিটারের দাম রাখছে ২২০ টাকা করে। বাজারে যার বর্তমান মূল্য ৩১০ টাকা। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট এবং হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। দুই লিটার ৩১০ থেকে ৩১৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৯৫ থেকে ৮১০ পর্যন্ত। আগামী সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়বে বলে জানালেন এসব মার্কেটের কয়েকজন খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন কোম্পানির সেলস-এ কাজ করা লোকজন এসব কথা বলেছেন বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। যার কারণে আগামী ১৫ দিন চালানোর মতো তেল কিনে তারা স্টক করেছেন বলেও জানালেন কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী।- রাইজিংবিডি.কম