শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

দুর্ভোগ চরমে, খানাখন্দে ভরা হিলি বন্দর সড়ক

মোসলেম উদ্দিন (হিলি) দিনাজপুর :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২২

অল্প বৃষ্টিতে হাটু-কোমড় পর্যন্ত পানি আর কাদা, আবার শুকনো মৌসুমে ধূলায় বায়ুদূষণ হয়ে বিপাকে পড়ে দিনাজপুরের হিলির সহ সকল ছোট-বড় যানবাহন চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন বন্দরের সড়কগুলোর বেহাল দশায় অতিষ্ঠ সবাই। উপর মহলে ধর্না ধরেও সুদিন আসছে না এখানকার বন্দরবাসীর। কবে নাগাদ এসব ভাঙাচোরা সড়কের কাজ শুরু হবে জানেন না তারা। হিলির স্থলবন্দর ঘুরে দেখা যায়, ইট বিছানো নক্কড়-ছক্কড় বন্দর সড়কগুলোোর বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরা বন্দর সড়ক, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে সকল যানবাহন। রাস্তার ধূলা-বালি আর গাড়ির কালো ধোয়া পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কগুলি। এবন্দরে বছরে শতশত কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। কিন্তু কোন রকম ভাগ্যের পরিবর্তন নেই এই বন্দরবাসীর। ভারত থেকে হিলি চেকপোস্টের প্রবেশ পথের শুরু থেকে বন্দর পর্যন্ত, চারমাথা থেকে দক্ষিণে মহিলা কলেজ ও সিপি থেকে উত্তরে দিনাজপুরে যাওয়ার সড়কটিতে ইট বিছানো। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো ইট দিয়ে হেয়ারিং করা। আবার নতুন করে সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে, বাড়ছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। প্রতিদিন ২০০ উপরে ভারতীয় পণ্যবাহী গাড়ি এবন্দরে প্রবেশ করে। আবার ৭০০ থেকে ৮০০ দেশি গাড়ি এই এবন্দরে প্রবেশ করে। এছাড়াও দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট এবং ঢাকাগামী সকল বাস-কোচ এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে থাকে। অল্প বর্ষার পানিতে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি শুকনা মৌসুমেও ধূলা-বালিতে রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বড় ভারি ওজনের গাড়ির পিছোনে থাকলে রিকশা-ভ্যানের থাকা চালক যাত্রী এবং পথচারীরা বেশি ক্ষতিতে পড়ে। ধূলা-বালিতে শরীর লেপটে যায়, অনেকেই আবার অসুস্থ হয়েও পড়ে। আজ হিলিবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন আর কতদিন পোহাতে হবে এই দুর্ভোগ? আদৌ কি নির্মাণ হবে তাদের কাঙ্খিত সড়কগুলো? হিলির স্থানীয় যুবক মার্শাল বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আমাদের এই হিলি শহরে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। একবার সংস্কার হয়েছিল, আর হয়নি। শুনে আসছি ভাল রাস্তা সরকার দিবে, কিন্তু আর কতদিনে হবে? হিলির সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, হিলি একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর, প্রতিদিন হাজার হাজার টন পণ্যবাহী ট্রাক এবন্দরে প্রবেশ করে। সরকার তা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা, আমরা চাই সরকার অবিলম্বে এই রাস্তাগুলো কাজ শুরু করবেন। হিলির স্থানীয়া বাসিন্দা তৌহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর হিলি, অথচ আজ হিলি অবহেলিত। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং জেলা প্রশাসক এই বন্দরের প্রতি কোন দৃষ্টি রাখে না। আমি দেশের সরকার মাননীয় শেখ হাসিনার হিলির বেহাল দশা সড়কগুলোোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ চাচ্ছি। একজন ভ্যানচালক মালেক বলেন, আমি ভ্যান চলায়, সারাদিন হিলি শহরে যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। রাস্তা যে খারাপ তাতে যাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। সরকার যদি রাস্তাগুলা ভাল করে দেয় তাহলে আমরা আরও দুইটা পয়সা বেশি কামাই করতে পারবো। হিলি রাজধানী মোড়ের মিজান, মোখলেছ সহ কয়েক জন দোকানদার বলেন, আমরা নৌকার এমপিকে ভোট দিলাম, নৌকার মেয়রকে ভোট দিলাম আবার নৌকার উপজেলা চেয়ারম্যানকেও ভোট দিলাম। কিন্তু কই আমাদের হিলিবাসীর ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হলো না। শহরের রাস্তার যে অবস্থা তাতে চলাচলের মত না। এই রাস্তা দিয়ে ভারি ভারি সকল যানবাহন যাতায়াত করে। এছাড়াও হাসপাতালে রোগী নিয়ে চলাচলের এরাস্তা আরও দুর্বিষহ। আমরা শুধু সুন্দর একটা সড়কের স্বপ্ন দেখেই আসছি, জানি না কবে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে? হিলি পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, হিলি স্থলবন্দরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছে। আমি প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবগত করেছি। তারা জানিয়েছেন হিলি থেকে জয়পুরহাটের সড়কের এ্যাকোর করা হলেই কাজ শুরু করে দিবেন। তিনি আর বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলেছেন হিলির সড়কের কাজ টেন্ডার হয়ে গেছে যত শীঘ্রয় কাজ শুরু হবে। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, হিলি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর, সরকার এবন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিলিকে নিজেস্ব অধিগ্রহণের আওতায় নিয়েছেন। আমাদের হিলি থেকে জয়পুরহাটের হিচমি পর্যন্ত ফোরল্যান্ড সড়ক নির্মাণের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হিলি সড়কের কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যেতো, কিন্তু আমার মনে হয় জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের অবহেলার কারণে কাজটি পিছিয়ে আছে। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, আমাদের হিলির রাস্তার যে দীর্ঘদিনের সমস্যা হয়ে পড়ে আছে, তা টেন্ডার হয়ে গেছে। এছাড়াও রাস্তার পাশে জমির অধিগ্রহণের প্রকৃয়া শুরু হয়েছে। আমরা বারংবার জেলা প্রশাসক সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবগত করেছি। আশা করি অচিরে হিলির সড়কের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এবিষয়ে দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী কর্মকর্তা মুনসুর আজিজ বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমরা একটি টিম গঠন করে হিলি পরিদর্শন করেছি। এখানকার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সবার সাথে কথা বলেছি। জমি অধিগ্রহণ প্রকৃয়া শেষ হলেই সড়কের কাজ শুরু করবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com