জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অধীন গঠিত গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের তালিকায় থাকা ৭৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৮-৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। গুমের তালিকায় থাকা আরো ব্যক্তির সন্ধান দেশের ভেতরে বা বাইরে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব বলেন, ৭৬ জনের তালিকা থেকে বেশ কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়ার কথা আমরা শুনেছি। এই খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের বিস্তারিত আমরা জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে জানিয়ে রাখছি। খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ৮-৯ জন হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এসব বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। গুমের তালিকায় থাকা আরো কয়েকজনকে বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গুমের তালিকা ধরে আরো খোঁজখবর নেয়া হবে। তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হবে। নিখোঁজ হওয়া ক্লু বিশ্লেষণ করা হবে। আর এসব তথ্য মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে অব্যাহতভাবে জানিয়ে রাখা হবে, যাতে বাংলাদেশ বিরোধী কোনো প্রচারণা বা আপত্তিকর কোনো সুপারিশ না আসে।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রে আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৬তম বৈঠক গত সোমবার থেকে জেনেভায় শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত। রুদ্ধদ্বার এসব বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের তিন শতাধিক গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হবে। পরবর্তী কোনো এক সময়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার তায়-উং বাইকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি ২৪টি দেশের গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন, সরকারি প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অংশীজনের সাথে কথা বলছে।
ইতোপূর্বে গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ সরকারের কাছে গুমের বেশ কিছু অভিযোগ জানানো হলেও সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ১৯৯৬ সাল থেকে ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আসছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কেবল একটি গুমের অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। অমীমাংসিত বাকি অভিযোগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার শিগগির জবাব দেবে বলে ওয়ার্কিং গ্রুপ আশা করে।
জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফরের অনুমতির জন্য বেশ কয়েকবার সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে সরকার এই অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ ২০২০ এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানিয়েও সরকারের কাছ থেকে সাড়া পায়নি ওয়ার্কিং গ্রুপ।