শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

মুমিনের অন্তরে আল্লাহু আকবারের প্রভাব

ইবরাহিম সুলতান
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনার সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম শব্দ আল্লাহু আকবার। এই শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটান এবং রবের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যে মুমিনের অন্তরে তাকবিরের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব যত বেশি হবে, তার ঈমানের প্রভাব তত বেশি প্রতিফলিত হবে। তাই ইসলামী শরিয়তে আজান ও নামাজের পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময় ও জীবনঘনিষ্ঠ নানা অনুষঙ্গে তাকবির পাঠের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
নি¤েœ আল্লাহু আকবার বলার কয়েকটি প্রভাব বা উপকারিতার দিক তুলে ধরা হলো:
খুশির সংবাদ শুনে আল্লাহু আকবার বলা সুন্নত: যেকোনো বৈধ খুশির সংবাদ শুনে আল্লাহু আকবার বলা সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম খুশির সংবাদ শুনে আল্লাহু আকবার বলতেন। সহিহ বুখারির এক দীর্ঘ বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবাদের বলেন, আমি আশা করি, তোমরা সব জান্নাতবাসীর এক-তৃতীয়াংশ হবে। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ (রা.) বলেন, তখন আমরা এ সংবাদ শুনে আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবির দিলাম। তিনি আবার বলেন, আমি আশা করি, তোমরা সব জান্নাতির অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবির দিলাম। তিনি বলেন, তোমরা তো অন্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কালো পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৪৮)
আগুন নেভাতে আল্লাহু আকবার সাহায্য করে: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো জায়গায় আগুন লেগে গেছে দেখো, তখন আল্লাহ আকবার বলতে থাকো। কেননা তাকবির আগুন নেভাতে সহায়ক। ’ আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা আগুন নেভাতে তাকবিরের সাহায্য নাও। (মাকাসিদুল হাসানা, হাদিস : ৬৩)
যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহু আকবারের প্রভাব: এক বর্ণনায় বসনিয়ার যুদ্ধে মুজাহিদদের অবস্থানের কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যখন মুজাহিদরা ময়দানে আসতেন এবং আল্লাহু আকবার বলে ধ্বনি উচ্চারণ করতেন। আল্লাহর শপথ! তখন বিপুল পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও সে অঞ্চলে একটা মুশরিক পুরুষ পাওয়া যেত না। সহিহ বুখারির বর্ণনায় আছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) অতি সকালে খায়বার প্রান্তরে প্রবেশ করেন। সে সময়ে ইহুদিরা কাঁধে কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন তাঁকে দেখতে পেল, তখন বলতে লাগল, মুহাম্মদ সেনাদলসহ আগমন করেছে, মুহাম্মদ সেনাদলসহ আগমন করেছে ফলে তারা দুর্গে ঢুকে পড়ল। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর উভয় হাত তুলে বললেন, ‘আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৯১)
আল্লাহু আকবার বলার কারণে শয়তান দূর হয়: তাকবির তথা আল্লাহু আকবার হলো এমন একটি বাক্য, যা কাফির এবং তাদের নেতৃবৃন্দ ও ইবলিসের মনে প্রচ- কম্পন সৃষ্টি করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, শয়তান যখন সালাতের আজান তথা (আল্লাহু আকবারের আওয়াজ) শুনতে পায়, তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে, যেন আজানের শব্দ তার কানে পৌঁছতে না পারে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (সালাত আদায়কারীর) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামাত শুনতে পায়, আবার চলে যায় যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামাত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (সালাত আদায়কারীদের অন্তরে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৪২ )
আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমে অহংকার দূর হয়: মানুষের জীবন ধ্বংসকারী মারাত্মক একটি স্বভাব হলো অহংকার। এই স্বভাবের লোকেরা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। কেননা তুমি তো কখনোই পদভারে পৃথিবী বিদীর্ণ করতে পারবে না। আর উচ্চতায় কখনো পর্বত সমান হতে পারবে না। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭) এই স্বভাব থেকে বাঁচতে প্রয়োজন খুব বেশি পরিমাণে তাকবির বা আল্লাহু আকবার পাঠ করা। কারণ, মুমিনের অন্তরে যখন আল্লাহ সবচেয়ে বড় এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন হবে, তখন সব অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তর পবিত্রতা লাভ করবে। আর এটিই আল্লাহু আকবারের সবচেয়ে বড় প্রভাব।
আল্লাহু আকবারের মাহাত্ম্য অনুধাবন-অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে: যখন কোনো মুমিন বান্দা মনের গভীর থেকে আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা করবে, তাকবিরের গুরুত্ব অনুধাবন করবে, সে গুনাহ ও সীমা লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে পারবে। কারণ যে মুমিনের অন্তরে সত্যিকারার্থে আল্লাহর সম্মান ও ভয় থাকে, সে কখনো গুনাহে লিপ্ত হতে পারে না; বরং তাকবিরের মর্মার্থ না বোঝার কারণেই মূলত মানুষ গুনাহের দিকে ধাবিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ আল্লাহর শাআইর (নিদর্শন)-কে সম্মান করলে এটা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়। ’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩২) আর আল্লাহু আকবার ‘শাআইরে ইসলাম’-এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি এর মর্যাদা রক্ষা করবে সে সব ধরনের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে। মহান আল্লাহ আমাদের বেশি আল্লাহু আকবার তথা তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করার তাওফিক দান করুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com