সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত কেউ যেন কমিশনে সুযোগ না পান: অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত কেউ যেন নির্বাচন কমিশনে সুযোগ না পান সেই বিষয়টি সার্চ কমিটিকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আমরা সবাই কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সবারই বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কমিশনে যারা সুযোগ পাবেন তারা যেন পূর্বে কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট নাগরিকদের বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শতভাগ আস্থা রাখতে পারি না। তবে আমরা বলেছি, যে ১০ জনের নাম সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে, তাদের নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়। তারপর হয়তো আস্থা-অনাস্থার বিষয়টি আসবে।’
বৈঠকে একই মতামত দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেন নির্বাচন কমিশনে স্থান না পান, সেই সুপারিশ করেছি। আমার এ দাবির সঙ্গে অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা জানেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, সুপারসিট করার মাধ্যমে, চাকরির সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকার অনেক সময় অনেকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে এবং যারা রিটায়ার্ডের পর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়েছে, এ ধরনের লোকেরা যেন নির্বাচন কমিশনে না আসেন। অবশ্যই যারা নির্বাচন কমিশনে আসবেন তাদের যেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা, সাহস ও ব্যক্তিত্ব থাকে।’
তিনি বলেন, কমিশনে গৃহীত সবার নাম যেন প্রচার করা হয়। যদি ৩০ জনকে সিলেক্ট (বাছাই) করা হয়, তাদের বিষয়ে যদি কারও জানা থাকে যে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সাপোর্ট করেছেন অথবা কোনো টকশোতে গিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অথবা বিপক্ষে কথা বলেছেন, তাহলে জনগণ বলতে পারবে তাদের যেন বাদ দেওয়া হয়।’ ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সার্চ কমিটি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। কিন্তু কতটুকু রাখবে সেটা নাম প্রকাশের পর আমরা বুঝতে পারবো’ বলেন আসিফ নজরুল। কোনো নাম দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো নাম দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু বলেছি কীসের ভিত্তিতে লোকদের নেওয়া উচিত আর কীসের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত নয়। আপনাদের কেমন আস্থা-অনাস্থা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শতভাগ আস্থা রাখতে পারি না। এছাড়া অনুসন্ধান কমিটি গঠন নিয়েও সমাজে ভিন্নমত ছিল। আমাদের কথা হচ্ছে, বৃক্ষ কী তা ফলেই পরিচয়। তবে আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনার বানানোর জন্য যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করা হবে, তাদের নাম যাতে আগেই ঘোষণ করা হয়। তারপর হয়তো আস্থা-অনাস্থার বিষয় আসবে।
তিনি বলেন, এই সরকারের সঙ্গে এর আগে আমি যতবার আলোচনায় গিয়েছি তখন তারা কোনো কথা রাখেনি। এবারও আমি আশাবাদী নাকি হতাশাবাদী সেটা অতীত ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখেন, ভবিষ্যতে কী করা হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন, তাহলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
এবারও আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো আসা-যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। তবে আমাদের হতাশা ও সংশয় থাকার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আমরা যদি বাইরে থেকে কথা বলি আপনারাই বলবেন আমরা কেন ভেতরে এসে কথা বললাম না। তারা যে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাতে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা এখানে খাওয়া কিংবা কথা বলার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। আমরা এসেছি যেন আমাদের অভিমত এবং পরামর্শ সুন্দরভাবে গ্রহণ করা হয়। মূল কথা হলো আমরা যাতে শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন পাই। আশা রাখা ছাড়া তো আমাদের উপায় নেই। এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের সেমিনার কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে ২০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হন ১৪ জন।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুসারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গত ৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। নবগঠিত সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com