শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন

সার্চ কমিটির হাতে ৩২৯ জনের নাম এসেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য এখন পর্যন্ত ৩২৯ জনের নাম প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেস লাউঞ্জে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ১৩৬ জনের, পেশাজীবীদের মাধ্যমে ৪০ জনের, ব্যক্তিগতভাবে ৩৪ জনের এবং ইমেইলের মাধ্যমে ৯৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। মোট ৩২৯ জনের নাম প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। এটা আমাদের কমিটি বসবে, বসে কীভাবে সিলেকশন করা যায় সেটা নির্ধারণ করবেন।
তবে এটি চূড়ান্ত সংখ্যা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমনও হতে পারে, একজনের নাম হয়তো চার-পাঁচবারও এসেছে। সেগুলো সর্টআউট করলে প্রকৃত সংখ্যাটা পাওয়া যাবে।’
বৈঠকে সার্চ কমিটির নামের তালিকা আগেই প্রকাশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা একটা সাজেশন, কমিটি যখন বসবে তখন ওনারা কার্যপদ্ধতি ঠিক করবেন। প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর বিধান মতে ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সার্চ কমিটি বাছাই করে ১০ জনের নাম পাঠাবেন এবং সেখান থেকেই পাঁচ জনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সার্চ কমিটির তালিকা আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করার প্রস্তাব: প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ে সার্চ কমিটির করা তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশিষ্ট নাগরিকদের কয়েকজন। তারা জানিয়েছেন, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য নিরপেক্ষ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সাহসী ব্যক্তিদের তালিকায় রাখার জন্য বলেছেন বিশিষ্টজনরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটি দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তিন দফায় বৈঠকের আয়োজন করেছে। প্রতি বৈঠকে দেশের ২০ জন করে বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আজ শনিবার প্রথম দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার অবশিষ্ট ২০ জনের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুটি গ্রুপের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা করেছি। প্রথম গ্রুপে ১৪ জন এবং পরের গ্রুপে ১১ জন অংশ নিয়েছেন। তারা বেশ কিছু সাজেশন দিয়েছেন। সবার মূল বক্তব্য হলো, এমন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা, যারা সবার অস্থাভাজন হবেন এবং ভালো নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে দিনের দ্বিতীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, আমরা সেরকম একটা প্রস্তাব সার্চ কমিটির কাছে দিয়েছি।’
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা বৈঠকে বলেছি, বিভক্ত রাজনীতিতে ঐকমত্য তৈরি করা মুশকিল। বিশেষ করে যখন সমাজের একটি অংশ, একটি রাজনৈতিক অংশ এই প্রক্রিয়ার বাইরে; তখন আপনাদের উপরে বাড়তি দায়িত্ব যাতে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি তালিকা আপনারা তৈরি করতে পারেন। কেননা যারা এই প্রক্রিয়া বর্জন করছেন তারাতো বিরোধিতা করবেই, এ অবস্থায় আপনারা আরও বেশি সতর্ক হবেন যেন একজন মানুষও বিতর্কিত না থাকে। গণমাধ্যমে তালিকা প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যাদেরই নির্বাচন করবেন, অন্তত কয়েকদিন আগে তাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, কারণ নাম প্রকাশ হলে তাদের সম্পর্কে গণমানুষের কোনও ক্ষোভ, অভিযোগ থাকলে জানা যাবে। যা নির্বাচিত হয়ে গেলে একটা কেলেঙ্কারির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ওনারা এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সার্চ কমিটি কোন তালিকা থেকে কাদের নাম পাঠাচ্ছেন? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার হতে আগ্রহী হয়ে সাড়ে তিনশো জন আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। অযৌক্তিতভাবে বয়সের সীমা টেনে না দিলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতো বলেই আমার অনুমান। সার্চ কমিটির কাছে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং ৬টি পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকেও নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কিছু কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। অনেক নামই শোনার পথ সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়া এইসব নাম ঐ ব্যক্তিদের সম্মতি নিয়ে জমা দেয়া হয়েছে কীনা আমরা তা জানিনা, কিন্ত দলগুলো নিশ্চয় জানেন তাঁদের দেয়া নামের ভার কতটুকু।
যারা নিজেরা আবেদন করেছেন এবং যাঁদের নাম দেয়া হয়েছে তাঁরা দেশের সেবা করতে আগ্রহী বলেই আমাদের ধরে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে এটা জানার নৈতিক অধিকার নিশ্চয় জনগণের আছে যে এই ব্যক্তিরা কারা।
সার্চ কমিটি কোন তালিকা থেকে কাদের নাম শেষ পর্যন্ত পাঠাচ্ছেন সেটাও জানা দরকার। সার্চ কমিটি যদি এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে চান তবে প্রথম কাজ হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে এই সব নাম অবিলম্বে প্রকাশ করা, সম্ভব হলে তাঁদের সিভি (যোগ্যতা এবং দক্ষতা) নাগরিকদের সামনে তুলে ধরা। যারা প্রকাশ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে আগ্রহী তাঁদের নাম তো গোপনীয় বিষয় হতে পারেনা।
বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় এবং পর পর দুটি কমিশনের দ্বরা রাজনীতির ও নির্বাচন ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতির প্রেক্ষিতে এটা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এটা সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরী নয় যে তাঁদের জন্যে স্বাভাবিক গোপনীয়তা অবলম্বনের দরকার। কোন দল কার নাম দিয়েছে সেটা সেভাবেই প্রকাশিত হলে নাগরিকরা বুঝতে পারবেন কোন দল বা পেশাজীবি সংগঠন কোন ধরণের কমিশন চাইছেন। ইতিমধ্যেই এটাও আমরা জানি যে, সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এই বৈঠক কেনো সরাসরি সকলের দেখার ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছেনা? এই বৈঠকে কে কী বলছেন সেটাও জানার অধিকার নাগরিকদের আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরণের বৈঠক ইত্যাদি প্রচারিত হয় ‘সি-স্পেন’ বলে একটি চ্যানেলে। বাংলাদেশে সেই ধরণের চ্যানেল নেই, সরকারী চ্যানেল বিটিভি সেটা করতে পারে। আমি অনুমান করি যে এটা প্রচারের জন্যে উন্মুক্ত করলে অন্য চ্যানেলেরও উৎসাহ থাকবে। তবে সকল চ্যানেলকে ডেকে এই আলোচনাকে জনসভায় পরিণত করার দরকার নেই। সার্চ কমিটি তাঁদের ওয়েব সাইটেই তা প্রচার করতে পারে, যে সব চ্যানেল চাইবে তাঁরা সেখান থেকে প্রচার করবে, যে নাগরিকরা দেখতে চাইবেন তাঁরা সেটা দেখবেন। এই ধরণের প্রযুক্তি এখন সহজে লভ্য। তদুপরি এই ভিডিও বাংলাদেশের ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে।
সার্চ কমিটি গঠনের আইন যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, পাশ করা হয়েছে সেগুলো স্বচ্ছতার উদাহরণ হয়নি। রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন হবে, এই বিষয়ে আইন করা হবে। কিন্ত পরে জানা গেলো যে, এই আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আলোচনা শুরুর আগেই। এগুলো স্বচ্ছতার উদাহরণ নয়। কিন্ত সেগুলোর দায় এই সার্চ কমিটির নয়। তাঁদের দায় তাঁদের কাজের। এখন এই কমিটি চাইলে তাঁদের কাজের স্বচ্ছতার উদাহরণ তৈরি করতে পারে। কেবল একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এমন আশা করার ভ্রান্তি আমার নেই। নির্বাচন কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন তার ওপরে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ওপরে। সেগুলো বিবেচনায় রেখেও এই সার্চ কমিটিকে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য – স্বচ্ছতার এবং জবাবদিহিতার একটি সুযোগ আপনাদের সামনে এসেছে। সেটা গ্রহণ করবেন কীনা সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com