সামনে আসছে পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই তিনটি বিশেষ দিবসে করোনার কারণে বিধিনিষেধ থাকায় মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীরা বেশ চিন্তিত। করোনার কারণে গত দুবছর লোকসান গুনতে হযেছে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদের। লোকসান দিয়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। তারপরও যারা লাভের আশায় এ পেশাকে ধরে রেখেছেন তারা বলেছেন করোনার বিধিনিষেধ না থাকলে ফুল বিক্রি করে ভালো দাম পাবেন, গত দুবছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখবেন, ঘুরে দাড়াতে পারবেন বলে তাদের আতœবিশ্বাস। করোনায় দফায় দফায় বিধিনিষেধ বাড়ার কারণে মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। সারাদেশে করোনার কারণে সরকার বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে আরও দুই সপ্তাহ। মাধবদীতে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সভা সসমাবেশ। এতে উদ্বিগ্ন মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীরা। কেননা ফুল বিক্রির বড় তিনটি দিন হলো পহেলা ফাল্গুন সহ ১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারি। এই তিন দিবসকে ঘিরে অনেক ফুল বিক্রির করার স্বপ্ন দেখছেন মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীরা। এ সময় ফুল বিক্রি করতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। মহামারী করোনার কারণে টানা দুই বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ী বাচ্চু ফুল ঘরের মালিক বাচ্চু মিয়া জানান, আসছে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পর্যাপ্ত ফুল বিক্রি করে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন তিনি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে হঠাৎ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে সরকার বিধিনিষেধ জারি করেছে। এতে চিন্তায় ফেলেছে তাকে। বিধিনিষেধে ইতোমধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়ায় কমতে শুরু করেছে ফুলের বিক্রি। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি নিয়ে সংশয়ে এই ফুল ব্যবসায়ী। তিনি আরো জানান আগে যে গোলাপ ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকায় কেনা যেতো এখন তা ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একদিকে বিধিনিষেধ অন্যদিকে ফুলের দাম বৃদ্ধি। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে যারা ইভেন্টের ব্যবসা করছেন তারা কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিচ্ছেন। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা ফুলের লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের ভেতর ফুল বাঁধার জন্য কামিনীর পাতা ভরা মৌসুমে এমন কর্মব্যস্ততায় মুখে হাসি থাকার কথা থাকলেও করোনায় দুঃশ্চিন্তা বিরাজ করছে মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীদের মনে। মাধবদী পৌর শহরের আনন্দী মোড়ে সৌরভ পুষ্পালয়ের মালিক শাহিন মিয়া বলেন, করোনার কারণে গত বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে কোন উৎসব না হওয়ায় ফুল বিক্রি করতে পারিনি। অনেক ফুলই নস্ট হয়েছে। তবে গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশ হওয়ায় ফুল বেচাকেনা ছিল ভালো। এবারও ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে আসন্ন সময়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন হানা দিয়েছে। তাই এ বছরও কত টাকার ফুল বিক্রি হবে, তা নিয়ে অবশ্য শঙ্কায় আছেন তিনি। কারণ, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপক হারে কমেছে। উৎসব আয়োজনও সীমিত হয়ে পড়েছে। অন্য অনেক ফুল ব্যবসায়ীরাও অতীতের মতো ফুল বিক্রি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ফুল বিক্রির এ ভাটা সময়ে ফুলের দাম চড়া থাকা নিয়েও সঙ্কায় রয়েছেন। বর্তমানে এক একটি ফুলের দাম পুর্বের চেয়ে তিনগুন বৃদ্ধিতে কিনতে হচ্ছে আর এতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলেও জানান। ফুলের ব্যবসাটি মূলত অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। গত দুই বছর লকডাউনের কারণে ফুল বিক্রি করতে না পেরে নিঃস্ব হতে বসেছিল অনেক ফুল ব্যবসায়ী। কেউ আবার ফুল বিক্রির ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেছেন। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন ফুলের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাদের কপালে। ফুলের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা তবে করোনা শুরু হওয়ার পর ফুলের ব্যবসা সঙ্কোচিত হয়ে পড়েছে। ফুল ব্যবসাযীদের সরকারীভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকায় তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। এ ব্যাপারে মাধবদীর ফুল ব্যবসায়ীরা সরকারের সর্ব্বাতœক সহযোগীতা কামনা করছেন।