বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

বালি বিক্রির কোটি কোটি টাকা লুটের অভিযোগ

বদরুল আলম দুলাল সিরাজগঞ্জ :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরে বালু ব্যাবস্থাপনা নীতিমালা অবজ্ঞা করে নদী খননের বালি বিক্রয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের উৎসবে নেমেছে প্রভাবশালি একাধিক চক্র। ড্রেজিংয়ে নিয়োজিত কোম্পানিগুলোর স্থানীয় প্রকৌশলী ও ব্যাবস্থাপকদের যোগসাজশে রাত-দিনে বালি বিক্রি চললেও অদৃশ্য কারনে নিরব রয়েছেন জেলা ও উপজেলা বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটি। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বৈধ বালিমহাল ব্যাবসায়িরা। বালি পরিবহনে নিয়োজিত শত শত ভারি যানবাহনের চাপে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারি রাস্তা, যানবাহনের হর্ন ও বালি উড়ে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয়সূত্র, বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ড্রেজিংয়ের বালি বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যাবসায়ি ও ভুক্তভোগি অভিযোগকারি এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি আইন অনুযায়ি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিংয়ের বালি ব্যাবস্থাপনার জন্য কমিটি রয়েছে। আইন অনুযায়ি জেলা পর্যায়ের বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রতি জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলি। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটি’র সভাপতি হবেন স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সম্পাদক হিসেবে থাকবেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বা উপজেলা প্রকৌশলী। পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের বালি ব্যাবস্থাপনা আইন অনুযায়ি যে কোন ড্রেজিং বা খননের বালি ব্যাবহারের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা বা সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া খনন এলাকার সরকারি খাস জমি পুনরুদ্ধারের জন্য ভরাটকাজে এই বালি ব্যাবহার করা যাবে। যদি কোথাও ভরাট বা পুনরুদ্ধার করার মত সরকারি খাস জমি না থাকে এবং কোন প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যাবহারের জন্য খননের এই বালি ব্যাবহার না করে তাহলে তা উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে এই বালি বিক্রয় করবে বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটি। সেক্ষেত্রে খননের বালি রাখার জন্য যদি কারো জমি ব্যাবহার করা হয় তাকে জায়গার নির্ধারিত ভাড়া প্রদান করতে হবে। সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনীর কারিগরি সহায়তায় সিরাজগঞ্জের করতোয়া, ফুলঝোড় ও হুরাসাগড় নদী খনন শুরু হয়। নদীখননের ফলে জেলার শাহজাদপুর থেকে শুরু করে উল্লাপাড়া পর্যন্ত কোটি কোটি সিএফটি বালি উত্তোলন হয়। এই দুটি অঞ্চলের একটি চক্র নদীখননের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট্রান ড্রেজিং ও মায়ার ড্রেজিংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে নিজ নামে ব্যাক্তি মালিকানাধিন শত শত একর জমি তিন বছর মেয়াদি লিজ নিয়ে সেখানে বালি ভরাট করে রাত-দিনে বালি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরেজমিন শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার করতোয়া নদীর পাড় এলাকা ঘুড়ে দেখা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার গারাদহ ইউনিয়নের টেপড়ি ও পুরান টেপড়ি এলাকায় অন্তত ১৫টি বালির স্টক করা হয়েছে। যেখান থেকে দেদারসে বালি বিক্রয় করছেন স্থানীয় পরিবহন ব্যাবসায়ি অরুন খান। তার নিকট থেকে বালি কিনে বিক্রি করছেন স্থানীয় গারাদহ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। অরুন খান কোন কোন স্টক থেকে ইতিমধ্যেই শতভাগ বালি বিক্রি করে ফেলেছেন। একইভাবে উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা, চর ঘাটিনা ও সোনতলা এলাকায় নদী শিখস্তির জমি, রেলওয়ের জমি ও ব্যাক্তি মালিকানাধিন অন্তত ১০০ একর জমিতে খননের বালি অন্তত ১০টি স্তুপ করে বিক্রি করছেন উল্লাপাড়া পৌর কাউন্সিলর আবুল কালাম আযাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জলের নেতৃত্বে একটি চক্র। এরা রাত-দিন সমানতালে বালি বিক্রি করছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিলেও কোন ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বালি বিক্রি বিষয়ে শাহজাদপুরের গারাদহ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি অরুন খানের নিকট থেকে বালি কিনে বিক্রি করছি। খননের সব বালি নাকি তার মালিকানায় আছে, তিনিই সব বিক্রি করছেন। পরিবহন ও বালি ব্যাবসায়ি অরুন খান বলেন, আমি জমি লিজ নিয়ে সেখানে খননের বালি স্তুপ করার জন্য দিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ি আমি ৪০ শতাংশের মালিক সেই বালি বিক্রি করছি। বালি ব্যাবস্থাপনা আইনের কথা বলা হলে তিনি বলেন আমি সব ম্যানেজ করেই বালি বিক্রি করছি। উল্লাপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবুল কালাম আযাদ বলেন, আমার নামে বালির ব্যাবসা চলছে, কিন্তু এই বালি বিক্রির টাকা জমা দিতে হচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জলের নিকট। তাদের নামে নাকি বালি ডিড করা আছে। উল্লাপাড়া বালি মহালের মালিক সলপ ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান বলেন, কিছু প্রভাবশালি অবৈধভাবে খননের বালি বিক্রি করছে। এরা অবৈধভাবে সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে অল্প দামে বালি বিক্রি করায় আমরা প্রকৃত বালি ব্যাবসায়িরা, যারা সরকারকে রাজস্ব দেই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আমি অতিদ্রুত খননের বালি বিক্রি বন্ধ করে উন্মুক্ত নিলামে বিক্রির ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই। তবে সেনাবাহিনীর দায়িত্বে বালি উত্তোলিত হবার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলার জন্য বলেন উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মওদুদ আহম্মেদ। এবিষয়ে উল্লাপাড়ার উপজেলায় খনন কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ২৪ বিগ্রেডের সার্জেন্ট আমিনুল ইসলামকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সরকারি আইন অনুযায়ি সিরাজগঞ্জ জেলা বালি ব্যাবস্থাপনা কমিটির সম্পাদক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, খননে উত্তোলিত বালি বিক্রির কোন বিধান নেই। যেহেতু সেনাবাহিনী এই বালি উত্তোলনে সম্পৃক্ত তারা হয়ত বালি রাখার জন্য জায়গা দিয়েছে তাদের টাকার পরিবর্তে কিছু বালি ব্যাবহারের অনুমতি দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু কিছুতেই নিলাম ব্যাতিত খোলা বাজারে খননের বালি বিক্রির সুযোগ নেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com