গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় শতাধিক স’মিলে (করাত কল) চলছে রমরমা অবৈধ ব্যবসা। এসব মিলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ। এতে পরিবেশের বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। দ্রুত এদের আইনের আওতায় আনার দাবী তাদের। বন বিভাগ জানায়, বন আইন ১৯২৭ ও তৎপ্রণীত সমিল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী কোনো সমিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স নেয়ার পর থেকে প্রতিবছর তা নবায়ন করতে হবে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় শতাধিক অবৈধ সমিল রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি সমিলের পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ আছে। অন্য সমিলগুলো লাইসেন্স ছাড়াই যুগের পর যুগ রমরমা ব্যবসা করে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন সমিল (করাত কল) ঘুরে দেখা যায়, মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলেও উপজেলাজুড়ে এ চিত্র একেবারেই বিপরীত। এসব মিল মালিকরা ১৫-২০ বছর ত্তথা যুগের পর যুগ অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছে স’মিল। লাইসেন্সবিহীন সমিলগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও এসব সমিল চলছে। এসব মিল চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব সমিলে বিরামহীন চলছে কাঠ কাটার কাজ। এতে পরিবেশের মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সর্বস্তরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে শখানিক সমিল। এসব সমিলে কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাঠ ফাঁড়ানো হয়। বিশেষ করে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এরা কিভাবে যুগের পর যুগ অনুমোদন ছাড়াই সমিল চালাচ্ছে তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখা দরকার। স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এসব অবৈধ সমিল যুগের পর যুগ চলছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব। দ্রুত এসব সমিল মালিককে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা। দহবন্দ ইউনিয়নের উত্তর ধুমাইটারী চান্দের মোড়স্থ ধুমাইটারী ফাজিল মাদ্রাসার পাশে অবস্থিত সমিলের মালিক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে অন্য সমিলে কাজ করতাম। সেই মালিকের কোন কাগজপত্র নাই। তাই আমিও কোন কাগজপত্র বা লাইসেন্স না করেই সমিল চালাচ্ছি। এতে কারো কোন সমস্যা না হলে আমারও সমস্যা হবে না। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের হাবলুর মোড়স্থ সুন্দরগঞ্জ কারিগরি কলেজের পাশে অবস্থিত মেসার্স শাহাদাৎ সমিলের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে এসিল্যান্ড স্যার এসে জরিমানা করে সমিল বন্ধ করে দেয়। কাজ-কর্ম না থাকায় আবারও সমিল চালু রেখেছি। অন্যদের সমিল চালানো দেখে আমিও চালু করে করেছি। প্রত্যয়নের জন্য আবেদন করেছি, প্রত্যয়ন পেলেই সমিলের অনুমোদনের জন্য আবেদন করবো। সোনারায় ইউনিয়নের ছাইতানতলা বাজারস্থ মেসার্স মুরসালিন সমিলের মালিক বাবলু মিয়া বলেন, আমি পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের লাইসেন্স নিয়ে সমিল চালাচ্ছি। বিভাগীয় রেঞ্জ কর্মকর্তার কারণে আমরা অনুমোদন পাচ্ছি না। তবে সচেতন মহল মনে করেন, এভাবে সরকারের অনুমোদন বিহীন করাত কল (সমিল) চলায় একদিকে পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা খন্দকার মেহেদী হাসান বলেন, অবৈধ স’মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সহকারী কমিশনার স্যারকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ৭টি সমিল বন্ধ করে দিয়েছি। ধারাবাহিকভাবে সবগুলো সমিলে অভিযান চালানো হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদ আল হাসান বলেন, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ৭টি সমিল গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দ্রুত অন্য সমিলগুলোতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে।