বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা বাঁধ ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব!

তৌফিকুর রহমান ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

শুকনো মৌসুমে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার নদীতে জেগে ওঠা আবাদি জমির মালিকদের জিম্মি করে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে কতিপয় অসাধু চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক হারে ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতিবছর বিলীন হয়ে যায় বসত-ভিটা, ঘর-বাড়ী, মসজিদ-মন্দির, আঞ্চলিক সড়ক ও স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সেসময় ভাঙনরোধে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও তা রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তীব্র হারে ভাঙন ও নদী পাড়ের ক্ষয়কে বালু উত্তোলনের একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে যমুনা ফার্টিলাজার সার পরিবহনের জন্য ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর সড়কের গোবিন্দাসী কাকুদাইর পযর্ন্ত সেতু রক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস ক্যান্টনমেন্টের গাইড বাঁধও।
সারা বছরই অবাধে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় ও প্রশাসনের লোকজনদের ম্যানেজ করেই এমন অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ রফিকুল ইসলাম ফরিদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের জগৎপুরা থেকে ননিল বাজার পর্যন্ত ৫টি ঘাট পরিচালনা করছেন তিনি। এতে ট্রাক প্রতি মিশন নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় কিছু নেতা। এসব ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা গ্রামের ভুক্তভোগি মো. মানিক হোসেন নামের এক ব্যক্তি অবৈধ বালুর ঘাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জগৎপুরা এলাকায় রাতের আধারে বেআইনিভাবে বালু মাটি কাটা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এসময় বালু মাটি কাটা বন্ধ করার কথা বলায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। অথচ অভিযোগের ১২ দিন পার হলেও অদৃশ্য কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া হতে নলীন বাজার বাজার পর্যন্ত সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেই গাইড বাঁধের কাছ থেকে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। এতে জগৎপুরা এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ৫টি বালুর ঘাট তৈরি করে ট্রাকযোগে বালু মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু মাটি কাটার ফলে বন্যার সময় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ এসব বালুর ঘাট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে অর্জুনা এলাকায় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় কতিপয় নেতা-কর্মীরা যত্রযত্র বালুর ঘাট তৈরি করেছে। বালু ব্যবসায়ীরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্যালাসাইডিং ভেঙে রাস্তা তৈরি করে হাজার হাজার ট্রাকে বালু বিক্রি করছে। জগৎপুরা গ্রামের রায়হান বলেন, আন্নেরা লিখে কি করবেন। প্রশাসনের লোকজন আসে বেশি টাকা পায় চলে যায়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ রহিজ উদ্দিন বলেন, যমুনায় বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এরমধ্যে প্রভাবশালীরা বাঁধের কাছ থেকে ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। কিছু বলতে গেলে মারধর করতে আসে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বিগত দুই মাস ধরে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করছে তারা। এভাবে বালু মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাবে। রাজন হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে যে গভীরতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তার থেকে বেশি গভীর করে বালু ভেকু দিয়ে কাটা হচ্ছে। এতে বন্যা হলেই ভেঙে পড়বে বাঁধ। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বালু উত্তোলণের ফলে হুমকিতে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। ক্ষতিগ্রস্থ অভিযোকারী মানিক হোসেন খান বলেন, বাপ-দাদার জমিতে চর জেগে উঠেছে। সেই চর জোরপূর্বকভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। বাঁধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। লিখিতভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, এ নিয়ে কোন মন্তব্য নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, বালুর ঘাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে রাতের আঁধারে আবার তারা বালুর ঘাট চালু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে এসব বালুর ঘাট বন্ধে সংবাদকর্মীদের ফোনের পর গত শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অর্জুনা ও জগৎপুরা এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর বাঁধের পাশে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, উপজেলার জগৎপুরা এলাকায় গাইড বাঁধের কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com