শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

বরিশালে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা ইলিশের ৮২ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে রাত নামলেই জাটকা শিকার

বরিশাল ব্যুরো :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

ইলিশের বিভিন্ন অভয়াশ্রে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত ১ মার্চ থেকে। জাটকা পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে টানা ২ মাস এ বিধিনিষেধ থাকবে। এদিকে ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে বরিশাল জেলার (হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল সদরের আংশিক) এমন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে জাটকা ধরছেন জেলেরা। রাতে অভিযান না থাকায় সারা রাত জাটকা শিকার চলছে মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খা নদের ৮২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট, হিজলার মৌলভীরহাট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত মোট ৮২ কিলোমিটার নদ-নদী ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমের আওতায় পড়েছে। এ সময় জাটকা বড় হতে দিতে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা রোধে প্রচার চালানো হলেও জেলেদের জাটকা শিকার করার কাজ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমের প্রধান ক্ষেত্র মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা। মেহেন্দীগঞ্জের অবস্থা নিয়ে হতাশ প্রশাসন। মেঘনা, কালাবাদর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেদার চলছে জাটকা শিকার। তবে জেলেরা জানিয়েছেন, তাঁরা পেটের দায়ে নদীতে নামছেন। কারণ এখনো তারা খাদ্য সহায়তা পাননি। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে দৈনিক দিনে ২টি দল নদীতে থাকে। ইতিমধ্যে ৫ জনের জেল ও ২ লাখ মিটার জাল জব্দ করেছেন। প্রথম দুই দিন জেলেরা নদীতে নামেনি। কিন্তু এখন আর থামানো যাচ্ছে না। নদীতে জাটকা প্রচুর। ১টা ইলিশ পেলে এর সঙ্গে ৫টা জাটকা ধরা পড়ছে। জেলেরা ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে নামে। তাদের অবস্থান টের পেলে পাশের খালে ঢুকে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর পিএসকে ফোন দিয়ে বলেছেন এখানকার মেঘনা, কালাবদরে জাটকা ধরা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কামাল হোসেন জানান, উত্তাল মেঘনায় জাটকা নিধন ঠেকাতে গিয়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন জেলেরা রাতেই নামে বেশি। কিন্তু রাতে অভিযান কঠিন। কেননা একবার কোস্টগার্ড মারা গেছে, ইউএনও আহত হয়েছেন। এখানকার মানুষ দুধর্ষ, নারীরা আসেন দল বেঁধে। তাঁরাও বিব্রত। যে কারণে রাতে অভিযানে নামা কঠিন। এ রকম পরিস্থিতিতে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড নিয়ে ঝটিকা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলো নদীতে কম বয়স্ক ছেলেদের নামিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেন না। মেহেন্দীগঞ্জ নৌ-পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. ফারুক জানান, পেটের দায়ের কথা বলে জেলেরা নদীতে নামে। যদিও তাঁরা জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছেন। এদিকে হিজলার মেঘনায় দেদার চলছে জাটকা শিকার। হিজলা গৌরবদীর মেঘনা, ধুলখোলা, আবুপুর, গঙ্গাপুর, নাছো কাঠি এলাকায় দল বেঁধে জাটকা নিধন করেন জেলেরা। এর নেপথ্যে একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলা সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, অভয়াশ্রমে নামে চলে নিষেধাজ্ঞা। মাছ ধরা তো অবাধে চলছে। মূল মেঘনায় অভিযানে যায় না প্রশাসন। অনেকটা লোক দেখানো কার্যক্রম। রাত থাকে অরক্ষিত। হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, গত ৫ দিনে ১৪ জনকে জেল, ২ জনকে জরিমানা এবং ৩০ হাজার মিটার জাল উদ্ধার করেছেন। ইতিমধ্যে ১৪টি অভিযান করেছেন। রাতে ফোর্স পাওয়া যায় না, তাই সচরাচর অভিযান করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, হিজলায় জাটকা শিকার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। নিজস্ব নৌকা নেই। শ্রমিক, পুলিশ ম্যানেজ করে অভিযানে নামা অনেক জটিল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযান চলমান রয়েছে উপজেলাগুলোতে। নৌবাহিনীও আছে। তবে রাতে আরও জোরদার অভিযান দরকার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com