রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ জানে না কেউ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২

রাজধানীতে এখন প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। গত এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, গত শবে বরাতের দিন থেকে বেড়ে যাওয়া গরুর মাংসের দাম আর কমবে কিনা তা অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ, এই দেশে কোনও জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমে না। তবে ঠিক কোন কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে তা জানেন না কেউই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার যেকোনও বাজারে এখন এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। শাহজাহানপুরের নামকরা গরুর মাংস বিক্রেতা খলিলের দোকানেও প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা দরে। তবে আসন্ন রমজানে এবং ঈদে কি দামে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে তা নির্ভর করছে বাজারে গরু সরবরাহের ওপর। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ফলে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাই এখন গরুর মাংসের মূল ক্রেতা। এক কেজি মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য রাখে এমন মানুষ এখন হাতে গোনা। কারণ, চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এক কেজি মাংস কেনা অসম্ভব। বিক্রেতারাও এখন আর এক কেজি মাংস বিক্রি করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কম পক্ষে দুই কেজি মাংস কিনতে ১৩ থেকে ১৪শ’ টাকার প্রয়োজন হয়। এমন সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যা কমেছে। মাঝারি আয়ের চাকরিজীবীদের রান্নাঘরে গরুর মাংসের প্রবেশও মাঝে মধ্যে ঘটে। দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর মাংস পাতে ওঠে না বলেই জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে গাবতলী বাজারের গরু ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ। খামারিরা এখন গরু বিক্রি করতে চায় না। কারণ, তিন মাস পরেই কোরবানি। তারা খামারে লালনপালন করা গরু বিক্রির জন্য কোরবানির বাজার ধরতে চায়। এ কারণে বাজারে গরুর সরবরাহ কমেছে। অপরদিকে দেশের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। শুষ্ক ঋতু বলে এখন লতাপাতা ঘাস বা খড় নেই। খামারে লালন করা গরুর জন্য দোকান থেকে কেনা খাদ্যই ভরসা। ফলে গরুর দাম বেড়েছে। আর গরুর দাম বাড়লে মাংসের দাম বাড়বেইÍযা খুবই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন মোবারক হোসেন। এদিকে রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, বাজারে গরুর মাংস কেনার কাস্টমার কমেছে। আগে যারা প্রতি সপ্তাহে ২ কেজি মাংস কিনতেন তারা এখন মাসে হয়তো একবার ২ কেজি মাংস কেনেন। মাসের বাকি সময় তারা এখন ব্রয়লার বা সোনালি মুরগির মাংস কেনেন বলে জানিয়েছেন তিনি। চাল, ডাল, তেল, চিনির দাম বাড়াও বাজারের অন্যান্য জিনিসে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন এই মাংস বিক্রেতা। সীমিত আয়ের মানুষের গরুর মাংস কেনার সাধ্য নেই বললেই চলে। যদিও দেশে গরুর মাংসের উৎপাদন বাড়ছে।
অথচ একটা সময় বাজারে বেশ সস্তায় গরুর মাংস পাওয়া যেত। সীমিত আয়ের মানুষেরা নিয়মিত তা কিনতে পারতেন। ক্রেতারাও স্বস্তিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তা খেতে পারতেন। কারণ, এক কেজি মাংসের সঙ্গে কয়েকটা আলু দিয়ে রান্না করে চার-পাঁচ জন সদস্যের পরিবারে দুই থেকে তিন বেলা চালানো যেতো। এখন তা দামের কারণে পোষায় না বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজধানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা ইসরাফিল আমিন জানিয়েছেন, রাজধানীতে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে এখন আর গরুর মাংস কিনে খাওয়ার দিন নেই। কারণ, দেড় হাজার টাকা দিয়ে দুই কেজি মাংস কেনার পর বাকি টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া, চলাফেরার খরচ মিটিয়ে দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে তিন বেলা ডাল-ভাত খাওয়া যাবে না। সেই সামর্থ্য এখন আর আমাদের নেই। কোরবানিই এখন আমাদের গরুর মাংস খাওয়ার একমাত্র অবলম্বন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে এক কেজি গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। ওই সময় মাঝারি আকারের দেশি মুরগির প্রতি কেজি দাম ছিল ৩১৭ টাকা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাবে, দেশি মুরগির গড় দাম ৩৫২ টাকায় ওঠে, আর গরুর মাংসের গড় দাম ৫২৭ টাকায় ঠেকে। ক্যাবের হিসাবে, গত অক্টোবরে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।
ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর গত চার বছরে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার হয়েছে। তরুণদের অনেকে বড় খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। সরকার দাবি করছে, নিজেদের গরুতেই ঈদুল আজহার বিপুল চাহিদা মিটছে। তবে তা দিয়ে বছরের অন্য সময়ের চাহিদার কতটুকু মিটছে তা অবশ্য অনেকটাই অদৃশ্য রয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখের মতো। ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর হিসাব দিয়েছিল, তখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ছিল।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ ইমরান বলেন, পশুখাদ্যের দাম খুবই চড়া। বাণিজ্যিকভাবে পশুখাদ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নাগালে না আনলে খামারে গরু পালন লাভজনক হবে না। আর লাভজনক না হলে খামারিরা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে গরুর উৎপাদন কমবে।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com