বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
যশোরের মহাসড়কে পিচের বদলে ইটের সলিং বদলগাছীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সদের কর্মবিরতি পালন ফটিকছড়িতে কৃষকের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ মহেশখালীতে যৌথ উচ্ছেদ অভিযান বনবিভাগের মানবসেবা অভিযান ভাঙ্গুড়া শাখা আয়োজিত হুইল চেয়ার, গাছ বিতরণ ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন বগুড়া শেরপুরের যৌন হয়রানির অভিযোগে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন কালিয়াকৈরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী (পুষ্প) তারাকান্দায় অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ সুজনের শার্শা উপজেলা কমিটি গঠন উলিপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই রাটিংয়ের সমস্যা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা ধারণক্ষমতার বেশি হলেই দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই রাটিংয়ের (দেবে যাওয়া) সমস্যায় ভুগছে সড়কটি। ২০৩৪ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৫৭ হাজার গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এখনই সড়কটিতে চলাচল করা গাড়ির সংখ্যা মাঝেমধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়বে, এমন হিসাব করে নির্মাণ করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক। ২০১৬ সালে মহাসড়ক চালুর পর থেকেই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে ১০ শতাংশের বেশি হারে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মাঝেমধ্যেই এখন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বেশি গাড়ি চলছে সড়কটিতে। আবার ২০ বছরের জন্য যে পরিমাণ লোড বহনের উপযোগী করে মহাসড়কটি তৈরি করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি লোড মাত্র চার বছরেই বহন করা হয়ে গেছে। ফলে সড়কটি যানজটপ্রবণ তো হয়েছেই, টেকসইও হয়নি। এখন সড়কটির সংস্কারে ৭৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ৫১ লাখ। এসবের মোটরযানের একটা বড় অংশ চলাচল করে সওজ অধিদপ্তরের সাড়ে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্কে। যদিও এ সড়ক নেটওয়ার্কের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ রয়েছে ভাঙাচোরা দশায়। ভুল পরিকল্পনা, নকশার ত্রুটি, নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সওজের সড়ক নেটওয়ার্কের সিংহভাগেই যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়ে মানুষ। বিঘিœত হয় পণ্য পরিবহন। সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে গত ১০ বছরে (২০১১-২১) প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সওজ অধিদপ্তর। বর্তমানে চলমান রয়েছে আরো ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প। ১৪০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩৫৮টি সড়ক সম্প্রসারণ ও লেন বাড়ানোর কথা জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর মধ্যে এসব প্রকল্পে চলতি বছর খরচ করা হয় ১৬ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলো ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, সড়ক-মহাসড়ক মজবুতীকরণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
তবে চলমান এসব প্রকল্পের সুফল নিয়ে এখন থেকেই সংশয়ে রয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাস্তবায়নের আগে সমীক্ষা না করা, অদূরদর্শী পরিকল্পনা, নির্মাণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি সর্বোপরি এসবের জন্য কাউকে দায়বদ্ধ না করার কারণে অতীতে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ হলেও সেগুলো টেকসই হয়নি। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চলমান প্রকল্পগুলোও একই ধারায় বাস্তবায়ন হওয়ার কথা উঠে আসছে। গাড়ির চাপে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাটি এমনিতেই যানজটপ্রবণ। এর ওপর যানজট পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে চলমান সড়ক উন্নয়নকাজ। সরেজমিন এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প এলাকায় ঘুরে নির্মাণকাজের কারণে তীব্র যানজট চোখে পড়েছে। কোথাও বিদ্যমান রাস্তা বন্ধ করে রাখা, কোথাও সড়ক সংকুচিত করে ফেলা আবার নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণযন্ত্রের কারণে জায়গায় জায়গায় তৈরি হচ্ছে গাড়ির জটলা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় দুই বছর ধরে সড়ক উন্নয়নকাজের জন্য তীব্র যানজটে জনভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।
উন্নয়নকাজের কারণে জনভোগান্তি কমবেশি দেশের সব সড়ক-মহাসড়কেই হচ্ছে। যদিও একই সময়ে সড়ক উন্নয়নে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান থাকার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, সব এলাকায় একসঙ্গে সড়ক যোগাযোগের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে গেলে একবারেই ভোগান্তি শেষ হয়ে যাবে। এজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, একটু কষ্ট করতে হবে। দেশের অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, কৃষি খাতসহ অন্যান্য উৎপাদনও বেড়েছে। এজন্য আমাদের সারা দেশে সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে এগুলোর প্রশস্ততা বাড়ানো, ভারবাহী করে তোলাও জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সড়ক অবকাঠামোসহ অন্যান্য ভৌত পুঁজি গড়ে উঠেছে। এসব ভৌত সম্পদ সংরক্ষণ, কার্যকর রাখার স্বার্থে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে শিল্পায়ন হবে দ্রুত। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, একই সঙ্গে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে। দেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের সড়ক নেটওয়ার্কে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশে যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ। বর্তমানে তা প্রায় ৫০ লাখে উন্নীত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কিন্তু আমরা এ সময়ে দেশের সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছি। দেশে গত এক যুগে যানবাহন বেড়েছে চার-পাঁচ গুণ। এরই মধ্যে যেসব সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে, সেগুলোয় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি স্বস্তিতে যাতায়াত করছে। গত এক দশকে বিনিয়োগ করা এমন প্রতিটি সড়ক অবকাঠামো থেকেই সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে আরো বেশি সুফল পাবে দেশের মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক তৈরির আগে যেসব পরিকল্পনা করা দরকার, বাংলাদেশে সেগুলো যথাযথভাবে করা হচ্ছে না। সমীক্ষা করা হলেও যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলোর কোনো মানদ- নেই। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হচ্ছে যারা সমীক্ষা করছেন, তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মাঠপর্যায়ের কাজটা ঠিকমতো করছেন না। আবার সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবতারও অনেক সময়ই সংযোগ ঘটছে না। কারণ সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পর সেগুলোয় চলাচল করছে অনিবন্ধিত নানা ধরনের যান, যেগুলো সমীক্ষায় বিবেচনায় নেয়া হয় না। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে দেশের অনেক সড়ক-মহাসড়ক।
আবার মহাপরিকল্পনা না করে শুধু সাময়িক উন্নয়নের কথা ভেবেও অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, সরকার জনগণের পালস বুঝে উন্নয়ন করছে। উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে চাইছে। ফলে একটি সড়ক অবকাঠামো তৈরি করে তাৎক্ষণিক দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হলেও সেগুলো টেকসই হচ্ছে না। মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এসব উন্নয়ন। দেশের সড়ক-মহাসড়ক অবকাঠামোর নির্মাণ ও সংস্কারে একের পর এক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা পর্যায়েই এমন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে সড়কের ভবিষ্যৎ ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টিও। আবার কখনো কখনো সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নির্মাণ পর্যায়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, বাস্তবায়নে বিলম্ব, তৈরির পর সড়কের যানবাহন চলাচলে নানা ধরনের অনিয়ম মিলিয়ে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই উপযোগিতা হারিয়ে ফেলছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেখা দিচ্ছে নতুন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com