বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
যশোরের মহাসড়কে পিচের বদলে ইটের সলিং বদলগাছীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সদের কর্মবিরতি পালন ফটিকছড়িতে কৃষকের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ মহেশখালীতে যৌথ উচ্ছেদ অভিযান বনবিভাগের মানবসেবা অভিযান ভাঙ্গুড়া শাখা আয়োজিত হুইল চেয়ার, গাছ বিতরণ ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন বগুড়া শেরপুরের যৌন হয়রানির অভিযোগে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন কালিয়াকৈরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী (পুষ্প) তারাকান্দায় অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ সুজনের শার্শা উপজেলা কমিটি গঠন উলিপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন

জনসাধারণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে রাজাপাকসেদের সিংহাসন টলছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকট। বাজারে খাবার নেই। চিকিৎসার ওষুধ নেই। জ্বালানির দোকানের সামনে দিনভর লাইন। সারা দিনে ১৩ থেকে ২০ ঘণ্টা ব্ল্যাক আউট। নিভিয়ে রাখা হচ্ছে সড়কবাতিগুলোও। জনসাধারণের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। ভয়াবহ রোষে ফুঁসছে গোটা শ্রীলংকা। টলে উঠেছে ক্ষমতাধর রাজাপাকসে পরিবারের শাসন। কিছুদিন আগেও যা কেউ ভাবতেই পারত না, শ্রীলংকায় এখন সেটিই ঘটছে। রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষ হয় তাদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। পরে তা তুলেও নেয়া হয়। বর্তমানে গোটা শ্রীলংকায়ই এক প্রকার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
চলমান অর্থনৈতিক দুর্যোগ সামাল দিতে না পারায় গোটা শ্রীলংকা এখন রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। বৃহস্পতিবার রাতে গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে জড়ো হয় কয়েকশ বিক্ষোভকারী। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে উত্তেজিত স্লোগান দিতে থাকে তারা। একপর্যায়ে বিক্ষোভ রূপ নেয় সহিংস সংঘর্ষে। এ সংঘর্ষ চলে রাতভর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছিটানো হয় গরম পানি। ছোড়া হয় টিয়ার গ্যাস। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনার সময় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তার বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন না। সংঘর্ষে আহত বিক্ষোভকারীর সংখ্যা প্রকাশ করেনি শ্রীলংকার পুলিশ। তবে কলম্বোর দুটি হাসপাতাল থেকে আহত অবস্থায় ২০-২৫ জন ভর্তি হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে আহত পুলিশের সংখ্যা ২৪। তাদের মধ্যে নয়জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের শিগগিরই আদালতে হাজির করা হবে। প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরের বিক্ষোভকে ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে শ্রীলংকার সরকার। বিক্ষোভের পেছনে বিরোধী দলের ‘উগ্র অংশকে’ দায়ী করা হচ্ছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এ নিয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু ‘উগ্রবাদীর’ উসকানিতে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। কিছুসংখ্যক লোক লোহার বার, লাঠিসোঁটা ও মুগুর হাতে বিক্ষোভকারীদের উত্তেজিত করে তোলে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিল নিরস্ত্র। উসকানিদাতাদের অনেককেই ‘সংগঠিত উগ্রপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শ্রীলংকায় ‘আরব বসন্ত’ ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে তারা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়।
এ বিষয়ে কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র অজিত রোহানা এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা জনগণের বিক্ষোভের অধিকারকে সম্মান করি। এ অধিকার সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু বিক্ষোভ করতে গিয়ে কেউ জনগণের সম্পদের ক্ষতি করতে পারে না। আটক ৫৩ জনকে শিগগিরই আদালতে তোলা হবে।
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গতকাল বিক্ষোভস্থল পরিদর্শন শেষে তার ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে দেখা করেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতভর সংঘর্ষের পর কলম্বোর সড়কগুলো গতকাল প্রায় ফাঁকা ছিল। যদিও রাজধানী কলম্বোর বাইরের অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। দেশটির আঞ্চলিক প্রশাসনের হর্তাকর্তারাও এখন জনরোষের শিকার হচ্ছেন। কলম্বোর উপকণ্ঠে মোরাতুয়া শহরের মেয়রের বাসভবনেও গতকাল হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। বিদ্যুতের দাবিতে মোরাতুয়ার মেয়র সামানলাল ফার্নান্দোর বাড়ির সামনে গতকাল ভিড় করে স্থানীয় বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মেয়রের বাড়ির দিকে ঢিল ছোড়া শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ডেকে আনা হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলংকার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশটিতে রাজাপাকসে পরিবারের শাসনকে দুর্বল করে তুলেছে। প্রতিদিনই গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ। এসব বিক্ষোভে এখন সহিংসতার মাত্রাও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, সরকারের দুর্বল আর্থিক ও কর ব্যবস্থাপনা, পর্যটন শিল্পের ধস, মহামারীর অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশটির অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়েছে। মারাত্মক আকার ধারণ করেছে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। জানুয়ারিতেই দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে রেকর্ড ২৫ শতাংশ। এ ধারা পরের মাসগুলোয়ও বজায় থাকবে। আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার সক্ষমতা হারিয়েছে দেশটির সরকার। দ্বিগুণ-তিন গুণ দাম দিয়েও বাজারে খাদ্য কিনতে পারছে না সাধারণ লংকাবাসী। শিশুখাদ্যেরও অভাব দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতিকে আরো প্রতিকূল করে তুলেছে জ্বালানি পণ্যের অভাব। কেরোসিনের জন্য জ্বালানির দোকানে লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষারত মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। লম্বা এসব লাইন থেকে যাতে কোনো নৈরাজ্য না ছড়ায়, সেজন্য জ্বালানির দোকানগুলোয় সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথ এখন পুরোপুরি রুদ্ধ। এরই মধ্যে মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতেও শুরু করেছে শ্রীলংকার চলমান সংকট।
প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতাও কমে এসেছে শ্রীলংকার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে দেশটির রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩০ কোটি ডলার। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে বড়জোর এক মাসের পণ্য আমদানি করতে পারবে দেশটি। তার ওপর দেশটিকে এ বছরের মধ্যেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৪০০ কোটি ডলারের মতো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com