গুরুদাসপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া মির্জাÑমামদু, খলিসাডাঙ্গা ও নন্দকুঁজার বুক জেগে ওঠেছে। শুস্ক মওসুমের শুরুতেই এসব নদীতে দেখা দিয়েছে দারুণ খরা। দখলÑদূষণ আর ভরাটের কবলে পড়া এসব নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছে চলনবিল রক্ষা আন্দোলণ কমিটি। এদিকে সম্প্রতি চাঁচকৈড় বাজারস্ত নন্দকুঁজা নদীর তীরে নদী রক্ষায় সভা করেছে চলনবিল ও নদ-নদী রক্ষা আন্দোলণ কমিটি। এতে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী, সাংবাদিক আলী আক্কাছসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় নদী রক্ষা আন্দোলণের যুগ্ম আহবায়ক এমদাদ মোল্লা বলেন, গুরুদাসপুর তথা চলনবিলের সকল মৃতপ্রায় নদী উদ্ধার ও এর নব্যতা ফিরাতে তারা ২০০৮ সাল থেকে আন্দোলণ করে যাচ্ছেন। কিন্তু নদীগুলো রক্ষায় দৃশ্যমান কোন অগ্রতি হয়নি। তাই চলনবিল ও নদী রক্ষায় সরকারের পৃথক পরিকল্পনা ও বরাদ্ধের দাবি তাদের। খোঁজ নিয়ে জানাগেছেÑ গুরুদাসপুর পৌর শহরসহ দুইটি ইউনিয়নের বুক চিরে নন্দকুঁজা নদীর প্রবাহ। চাঁচকৈড়ের ত্রীÑমোহনা থেকে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমের নাজিরপুর, চাপিলা ইউনিয়ন ও বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর হয়ে নাটোরের নারোদ নদীতে মিশেছে নন্দকুঁজা। নদী পাড়ের লোকজন বলছেনÑ একসময়কার প্রবাহমান খর¯্রােতা নন্দকুঁজায় খরা ডেকেছে। শুকনোয় পড়েছে নৌকা, মাছ ধরা খরা জাল। অথচ এই নদীকে ঘিরেই বহু বছর আগে গুরুদাসপুরে গড়ে ওঠেছিল চাঁচকৈড় হাট। উত্তর জনপদের আটটি জেলার মানুষ নৌকায় এই হাটে বাণিজ্য করতেন। এখন নদীটি মরা খালে পরিণত হলেও রক্ষার উদ্যোগ নেই। চলনবিল ও নদ-নদী রক্ষা আন্দোলণ কমিটির আহবায়ক মজিবর রহমান মজনু ইত্তেফাককে জানানÑ নন্দকুঁজা ছাড়াও তুলশিগঙ্গা, মির্জাÑমামুদ ও খলিসাডাঙ্গা নদী দখলÑদূষণে মৃত প্রায় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নন্দকুঁজা নদীর চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া থেকে উৎপত্তি হয়ে চলনালী-কান্দিপাড়া, কান্টাগাড়ি বিল হয়ে পাটপাড়া, সোনাবাজু, চাকলের বিল এবং পশ্চিমের চাপিলা হয়ে আবারো নন্দকুঁজায় মিলিত হয়েছে মির্জা-মামুদ নদী। এই নদীর সংযোগ নালা বয়ে গেছে দক্ষিণের সিধুলী হয়ে চরকাদহ, ধারাবারিষা, চামটা বিলে। অথচ এই নদীর উৎসমুখ চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া থেকে দখল শুরু হয়ে নওপাড়া পর্যন্ত সংকুচিত হয়েছে নদী। এছাড়া নওপাড়া থেকে দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদীটির স্মৃতিচিহৃ-ই মুছে গেছে। নদী রক্ষা আন্দোলণ কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, খলিসাডাঙ্গা নদীটি বড়াইগ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে গুরুদাসপুরের চাপিলা দিয়ে এর প্রবাহ। নদীটি সোনাবাজুÑপাটপাড়া এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই নদীর গুরুদাসপুর অংশের সবটুকুই দখল হয়ে বসতি গড়ে ওঠেছে। কোথাও নদীর অস্তিত্ব নেই। সিএস নকশা ধরে এসব নদী উদ্ধারের দাবি জানান তিনি। পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান জানান, নন্দকুঁজা, তুলশিগঙ্গা, মির্জাÑমামুদ ও খলিসাডাঙ্গা নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব নদী রক্ষায় চলনবিলজুড়ে বৃহৎ আন্দোলনের উদ্যোগ নেবেন তারা। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোকলেসুর রহমান বলেন, নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চলমান আছে। তাছাড়া বড়াল, নারদ, নন্দকুঁজা ও মুসাখা নদী খননের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।