বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা ধনবাড়ীতে ৬ ওষুধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা শেরপুরে কানাডা প্রবাসীর জমি বেদখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কালিয়ায় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি মেলা বাকাল মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান বদলগাছীতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের বাছাই কার্যক্রম নগরকান্দায় সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ গরমে স্বস্তি দিতে বাগেরহাটে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বন্দরে যত্রতত্র পার্কিং,জ্যামে নাকাল জনজীবন, মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রায়গঞ্জে চার জয়িতার সাফল্য গাঁথা

‘মারল ছাত্রলীগ, রিমান্ডে বিএনপি! ’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২
কুরিয়ারকর্মী নাহিদকে কোপানো এই হেলমেটধারী ছাত্রলীগের একজন কর্মী বলে জানা যাচ্ছে।ছবি: ডেইলি স্টারের সৌজন্যে 

পৃথিবীতে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে 

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি গত মঙ্গলবার নিউমার্কেটে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে মতামতের কলামে গত ২৪ এপ্রিল লিখেছেন,‘ মারল ছাত্রলীগ, রিমান্ডে বিএনপি।’ প্রতিবেদনটি দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো,‘গত মঙ্গলবার নিউমার্কেটে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় স্থানীয় বিএনপির নেতা মকবুল হোসেনকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে সেদিনের সংঘর্ষে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কারা হেলমেট পরে চাপাতি, রামদা ইত্যাদি নিয়ে নাহিদ ও মুরসালিন নামের দুই নিরীহ তরুণকে খুন করেছে, সেই তথ্য ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। এতে দেখা যায়, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিবদমান চার গ্রুপের নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন। তাহলে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কি স্থানীয় বিএনপি নেতার হুকুমে এসব সন্ত্রাসী কাজ করেছেন? বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক সমঝোতার কথা আমরা জানি, ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে কিংবা ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির কোনো নেতার হুকুমে মারপিট, ভাঙচুর করেছে, পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছে, এমন উদাহরণ কেউ দেখাতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিন নিউমার্কেট এলাকার সংঘর্ষ থামাতে পারেনি, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আড়াই ঘণ্টা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে তারা। পুলিশ সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে হয়তো নাহিদ ও মুরসালিনকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। নাহিদ একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী আর মুরসালিন একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেদিন দোকান কর্মচারী ও ছাত্রলীগের কর্মীরা উভয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন। হতে পারে এ কারণে পুলিশ কোন পক্ষে যাবে ঠিক করতে পারছিল না। কেননা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এখন জাতীয় স্লোগান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে কী সত্য বের করতে চায়? বিএনপি বা অন্য যেকোনো দলের নেতা-কর্মী সংঘর্ষ করলে, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করলে, পুলিশের কাজে বাধা দিলে অবশ্যই পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেদিনের ঘটনাটি ঘটেছে দিনের বেলায় শত শত লোকের সামনে। টিভিতে ছবি দেখানো হয়েছে। পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। গত শুক্রবার ডেইলি স্টারের ছবিতে দেখা যায়, একজন হেলমেটধারী তরুণ লম্বা ছড়ি দিয়ে নাহিদকে কোপাচ্ছেন। তাঁর পেছনে আরও ছয় হেলমেটধারী তরুণ দাঁড়িয়ে আছেন। রোববার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ‘নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। দুজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। থাকেন কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসে। একজনের নাম কাইয়ুম, অন্যজনের নাম বলতে চায়নি পুলিশ। দুজনেই ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতার অনুসারী। সংঘর্ষের ঘটনায় সংগ্রহ করা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া ধারালো অস্ত্র হাতে মঙ্গলবার রাস্তায় যাঁদের দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে আরও দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁরাও ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ডিবি বলছে, নাহিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেলমেটধারী এবং হেলমেট ছাড়া একাধিক ব্যক্তি কুপিয়েছেন। এর মধ্যে একজনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যাঁর ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাঁর পরিচয় সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দুজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে, যাঁদের একজন সেই অস্ত্রধারী হতে পারেন।’প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ও হেলমেট পরে ঢাকা কলেজের যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির চার নেতার অনুসারীরা বেশি সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে নাহিদ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জসীম উদ্দিন ও নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ফিরোজ হোসেনের অনুসারী। নাহিদকে কোপানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের একজন ঢাকা কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসের ২০১ নম্বর কক্ষে থাকেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা। সেই কক্ষে জসীম উদ্দিনের অনুসারীরাও থাকেন বলে ছাত্রলীগের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। এ বিষয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, ২০১ নম্বর কক্ষে একাধিক গ্রুপের ছাত্ররা থাকে। খবরের পাশাপাশি প্রথম আলোয় ছাত্রলীগের তিন অস্ত্রধারীর ছবিও ছাপা হয়েছে। কাইয়ুম, কাউসার হামিদ ও শাহীন সাদের মির্জা। তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা যেমন আছেন, তেমনি আছেন নতুন কমিটির সম্ভাব্য নেতাও। ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও চারটি গ্রুপ আছে, যার নেতৃত্বে আছেন চার নেতা। সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ করেছে। ব্যবসায়ীদের বিচার চেয়েছে। কিন্তু তাদের কেউ বিএনপির বা ছাত্রদলে জড়িত থাকার কথা বলেননি। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে সংঘর্ষে ইন্ধন নেওয়ার দায়ে। কিন্তু ইন্ধন কাদের দিল সেই খবর নেই। সংঘর্ষে লিপ্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে না হলে গোপনে কি বিএনপির নেতাদের নাম বলেছেন? সে ক্ষেত্রে তাঁরা কি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী থাকতে পারেন? রোববার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ছাত্রলীগের কাউকে ধরতেই পারেনি। তাহলে কি গায়েবি মামলার মতো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের কাছে গায়েবি জবানবন্দি দিয়েছেন? যে দুটি দোকানের দুই কর্মচারীর মধ্যে বিত-া থেকে সংঘর্ষের শুরু, তার একটির মালিক মকবুল হোসেন। এটা কি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ও রিমান্ডে নেওয়ার যুক্তি? দোকান ভাড়া দেওয়ার কারণে যদি তিনি মামলার আসামি হন, তাহলে আরও অনেক দোকানমালিকের আসামি হওয়ার কথা। তিনি নিজে দোকান চালালে, কিংবা তাঁর কর্মচারী বিত-ায় লিপ্ত হলে বলা যেত তাঁর হুকুমে বা ইঙ্গিতেই এটি হয়েছে। এখানে কে কাকে হুকুম দিল? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের চিহ্নিত করা হবে। ভিডিও ফুটেজে যাঁদের ছবি দেখা গেছে, ভাইরাল হয়েছেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির ২৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করল। এর মাধ্যমে পুলিশ প্রমাণ করতে চাইছে যে ওই দিন ছাত্রলীগের যেসব হেলমেটধারী নেতা-কর্মী চাপাতি ও ছুরি নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, সাংবাদিকদের মারধর করেছেন, ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাঁরা সবাই বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনের শাগরেদ। তাঁর কথাই সেদিন তাঁরা এসব কা- করেছেন। পুলিশের এই বয়ান যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে নিয়ে বিএনপির কাছে অর্পণ করতে হয়। পৃথিবীতে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটাল!’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com