শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

সাবেক অর্থমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই

বাসস:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাকে কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত একজন শিক্ষক। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া আবদুল মুহিত বরাবরই একজন মেধাবী মানুষ ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে তিনি সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। সিএসপিতে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি পরিকল্পনা সচিব হন। এর আগে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের উপসচিব থাকাকালে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক। ১৯৭৭-৮১ পর্যন্ত তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ছিলেন এবং ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।
তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি ৪০টি বই লিখেছেন।
মন্ত্রী ও বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক: খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত’র মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল শনিববার পৃথক শোক বার্তায় তারা আবুল মাল আবদুল মুহিত’র রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এছাড়া, আবুল মাল আবদুল মুহিত’র মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো. হুমায়ুন কবির ও গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com