শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

সিলেটে বন্যা ধাপিয়ে বাড়ছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্লাবিত নতুন এলাকা

এম এ মতিন, সিলেট:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। উজানের ঢলে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে সিলেট জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা। এবারো তেমন বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সিলেট নগরেও ঢুকে গেছে পানি। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। উপশহরসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ ঘরবন্দি। প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্টান তলিয়ে গেছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের সৃষ্ট বন্যার রেকর্ড ভঙ্গ করবে এবারের বন্যা। প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পানি। উজানের ঢল না থামলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। টানা বৃষ্টিতে সিলেটের ছয় উপজেলার পাশাপাশি নগরীর বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। এদিকে পানিবন্দি মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। সিলেটে বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় লোকজন ভেগান্তিতে পড়েছেন। পাশা পাশি গ্যাসের ও সংকট রয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে দেখা গেছে, নগরীর আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। স্কুল কলেজে অনিয়মিত ছুটি চলছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’বন্যায় জেলাজুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ বন্যা কবলিতদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বেলা ১২টায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে আট সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট ফায়ার সার্ভিস অফিস, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, কোতোয়ালী থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। সিলেট নগর ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এখন পানি। বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে সিলেট নগরীর সাতটি ওয়ার্ডে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন। সেগুলো হচ্ছে, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরাবাজার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চালিবন্দর রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, চালিবন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল হামিদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছিমপুর, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বোরহান উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উমরশাহ তেরোরতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জাজাঙ্গাল স্কুল, মনিপুরী রাজবাড়ি আশ্রয় কেন্দ্র ও মাছুদিঘীর পাড়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসিটুলা স্কুল, ইউসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশের ৪তলা ভবন, ২৬ নং ওয়ার্ডে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে হবিনন্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট। এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইয়িদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিও কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে সহসা পরিত্রাণ পাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সিলেটে বন্যায় দুর্ভোগ বেড়েছে: সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে। গতকাল বুধবার (১৮ মে) সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়া সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যুৎ ছিল না দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ।
ওই সব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমড় পর্যন্ত পানি রয়েছে। পানির কারণে মানুষজন রাস্তায় চলাচল করতে পারছেন না। বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। জানা গেছে, বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার দোকানপাট ও হাটাবাজার পানির নিচে থাকায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা-সারি, ধলাই সবকটি নদনদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গতকাল বুধবার সিলেট আসছেন। ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলা শহর, ছাতক পৌর শহরের পাড়া মহল্লার সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘরে ঢুকছে ঢলের পানি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে যান চলাচল।
সিলেট শহরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোমড় সমান কোথাও হাটু পানি। নালার ময়লা মিশ্রিত পানি বাসা বাড়িতে ঢুকছে। ময়লা দুর্গন্ধ জনিত পানি মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে নগর বাসীকে। নগরের সোবহানীঘাট, তেরো রতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, সাদিপুর, ছড়ারপার, কালীঘাট, তালতলা, তোপখানা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, কাজিরবাজার, মোল্লাপাড়া, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া, শেখঘাট, খারপাড়া, মজুমদারপাড়া, আখালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নগরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক জায়গায় নলকূপ ও চুলা পানিতে ডুবে গেছে। পানি বাড়ায় বিছানাপত্র রক্ষায় অনেকে খাটের নিচে ইট বিছিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার পীরপুর, হায়দরপুর, টুকেরগাঁও, শাহপুর, গৌরিপুর, মইয়ারচর, নওয়া খুরুমখলা, নাজিরগাঁও, শেখপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। এসব এলাকায় কোথাও চার ফুটের ওপর পানি। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী কান্দিরগাঁও ইউনিয়নে। জালালাবাদ ইউনিয়নের শিবেরবাজার এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেট সিটি করপোরেশন নগরের সাতটি ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। সিলেট নগরীর এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক বন্যা দুর্গত লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া সুরমা নদীর তীরবর্তী বরইকান্দি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-৩-এ পানি প্রবেশ করায় মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে স্টেশন রোড, বাবনা, বঙ্গবীর রোড, পিরোজপুর, লাউয়াই, বরইকান্দি, মোল্লারগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যমুনা তেল ডিপোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তেল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সুরমা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা চালের আড়ত ও মিলে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণে ধান-চাল ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে ট্রাকযোগে ধান-চাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে সীমান্তবর্তী সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তীত রয়েছে। গরু-মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষজন। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা-জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরাবাজের পানি উঠে যাওয়ায় যানচলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। সিলেট শহরের সঙ্গে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পরিবহনের অভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল।
কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর, ইছাকলস, দক্ষিণ রনিখাইসহ সবকটা ইউনিয়নের তিন-চারটি করে গ্রাম ছাড়া বাকি সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। অনেকে আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। ওই সব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করছেন। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না অনেকে। এ অবস্থায় অত্যন্ত কষ্টেআছেন ইউনিয়নবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, ‘উজানে এখনো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আজ তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেট সদরের হাটখোলা-জালালাবাদসহ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। ত্রান ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানও সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈয়ন্তাপুর এলাকা পরিদর্শন করবেন।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com