বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন

কাকতালীয়! অতিকাকতালীয়!

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ মে, ২০২২

বলটা সীমানা প্রাচীর তখনো ছুঁয়ে সারেনি, লাল- সবুজের সমারোহে ডাবলিন বুকে জেগে উঠা একখ- বাংলাদেশ হঠাৎ-ই গ্যালারির পিন পতন নীরবতা ভেঙে গর্জে ওঠল; মুহূর্তেই পরিণত হলো উৎসবের মঞ্চে! সেকেন্ড ভগ্নাংশে শত মাইলের দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সেই উৎসবের রং ছড়াল লাল- সবুজের বঙ্গ মানচিত্রে! বঙ্গভূমির দীর্ঘ ২১ বছরের বিনিদ্র রাত্রির অবসান হলো; ভাগ্যের ঘুরপাকে প্রখর রৌদ্রের প্রচ- উত্তাপে অবশেষে স্বস্তির এক পলশা বৃষ্টি ঝরানো জয় পেল বাংলাদেশ! না… না… এ শুধুই জয় নয়; এ যে আরাধ্য সাধন প্রথম শিরোপা জয়! পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে, সূর্য ডোবে রক্তপাতে’- যেন সেদিন মিথ্যে হয়। একুশ বছরে দেখা হয়েছে ছ-ছ’বার; এক বছরে তিনবার কিন্তু চোখে চোখ রেখেও সৌভাগ্য হয়নি ছুঁয়ে দেখার! ভাগ্য বিভ্রমে হাত ফসকেছে বার বার। শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল দিয়ে, অতঃপর ২০১২ ও ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালও একই পথে। আর ‘১৮-এ তো তিন-তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেও জয় নিশান উড়েনি; আক্ষেপ সঙ্গী! প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করে ব্যাট কিংবা বল হাতে সাফল্যের ভিত রচনা বা সাফল্যের বন্দরে নোঙর তোলা- সব কাজেই বাঘ দলে পঞ্চরতœ সদা অগ্রণী ভূমিকায়। তবে সেদিন ডাবলিনের মালহিডের ‘দ্যা ভিলেজ’ মাঠে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। পঞ্চরতœ নয়, এ জয়ের নেপথ্য বা রূপকার; দুই তরুণ তুর্কি সৈকত আর সরকার! বৃষ্টি বাধা শেষে টস ভাগ্যে হার মেনে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারাবীয়দের সংগ্রহ ২৪ ওভারে ১৫২/১। ক্রিকেটের বৃষ্টি আইনে বাঘেদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় সমান ওভারে ২১০ রানে। ওভারপ্রতি লক্ষ্যমাত্রা ৮.৭৫ রান! তবে কি এবারও হয়েও হলো না অপেক্ষার শেষ? লক্ষটা সহজ ছিল না মোটেই; প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত সূচনার। সৌম্যর ঝড়ো উইলোবাজির সাথে তামিমের (১৩ বলে ১৮) সমর্থনে প্রথম ৫.৩ ওভারে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দেখা মেলে সেই সূচনার! শুরুর ঝড়টা সৌম্যের, তার ১৬০.৯৭ স্ট্রাইকরেটে ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংসটি জয়ের পথে, আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে! তবে মাঝের সময়টায় দ্রুত উইকেট হারিয়ে কম্পন দিয়েছিলো বাঘ সমর্থক অন্তরে। ১৪৩ রানে ৫ উইকেট প্যাভিলিয়নে; তখনো প্রয়োজন ৪৮ বলে ৬৭ রান! মাঠে তখন দুই ‘মমেসিঙ্গা’; অভিজ্ঞ তারুণ্যেন মিশ্রণ। সময়ের ক্রমশ ক্ষয়ে শেষ ২৪ বলে যখন ৩৯ রান প্রয়োজন, ঠিক তখনই বিদ্যুতের ঝলক দিয়ে জেগে উঠল তরুণ! ২১ নম্বর ওভারে ক্যারাবীয় পেসারব রোচকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা!
ওই ওভারে ১২ তুলে পরবর্তী ওভারে রীতিমত আগ্রাসী মূর্তি সে তরুণ মোসাদ্দেক। ওই ওভারে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের ওপর প্রবল বেগে আক্রমণ; তিন তিনবার আছড়ে ফেললেন গ্যালারির ওপারে। সাথে এক বাউন্ডারির মারে, ওভারে তুলে নিলেম ২৫ রান! তাতে শেষ দু’ ওভারের সমীকরণ ২ রান; মাহমুদউল্লাহ সেই গ্যালারি কাঁপানো চারে ৭ বল হাতেই স্পর্শ লক্ষ্যস্থান। শেষ দিকে ২১৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ২৭ বলে ৫২ রানের উত্তাল ইনিংস (পাঁচটি ছক্কা ও দুটি বাউন্ডারি) খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো রাজ্যজয়ী নাবিক তরুণ মোসাদ্দেক পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। একদিন নিশ্চয়ই বহু স্মরণীয় জয় আসবে বাংলার ইতিহাসে; জিতবে অনেক শিরোপা, হয়তোবা একদিন বিশ্বকাপটাও তবে, প্রথম শিরোপা জয়ের কথা কি ভোলা যায়? স্মৃতিপটে তা নিপুণভাবে অঙ্কিত থাকবে কালে কালে, মহাকালে! ও হ্যাঁ! এই দিনেই কিন্তু বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম জয়টাও পেয়েছিলো। আজ ২১ বছর পর ঠিক সেই ১৭ মে’তেই প্রথম শিরোপা জয়! ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটের প্রথম জয়টিও ছিল এই ১৭ মে তারিখে। তাছাড়া, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটিও ছিল একই তারিখে ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে!- দৈনিক নয়াদিগন্ত




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com