দেশটা ‘ব্ল্যাকমেইলিং’-এর মধ্যে ঢুকে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের মালিকরা সরকারকে ব্ল্যাকমেইলিং করে, আর সরকার সংবাদপত্রের মালিকদের ব্লাকমেইলিং করে। গয়েশ্বর রায় বলেন, ব্যবসায়ী আর জমি দখলের ডাকাতরা মিডিয়ার মালিক। তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এক একটা বিজনেস হাউজ চারটা পাঁচটা করে পত্রিকার চালু করে। যারা মানুষের রক্ত চুষে খায়। তাদের হাতে এইসব পত্রিকা থাকলে দেশের দুরবস্থা ছাড়া আর কোনো গতি নাই। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আসসালাম চৌধুরী মুক্তি পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেয়ার মন্তব?্যর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুষ্টুমি করেই হোক বা এমনি হোক একজনকে টুস করে ফেলে দেয়া আরেকজনকে চুবানো এইটা তো হত্যার হুমকি। এটেম টু মার্ডার। আমাদের যে এত আইনজীবী ফোরাম আছে তারা কি এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে? করে নাই। আর আমরা কোনো কথা বললে দেশের আনাচে-কোনাচে খালি মামলাই হয়।
তিনি বলেন, আমি জানি আদালতে গেলে এই মামলা টিকবে না। যে দেশের আদালত সরকারের অপকর্মকে লালন পালন করে, সাফাই গায়, যে দেশে সরকারে দুর্নীতি, মুদ্রাপাচার, নারী নির্যাতন থেকে আরাম্ব করে খুন গুম এগুলোকে টেলিভিশনের টকশোতে লোক ভাড়া করে সাফাই গায়, সেই দেশে আমরা কোন অবস্থায় আছি সেইটা বুঝতে হবে। এখন যদি আমরা হাশরের ময়দান পর্যন্ত অপেক্ষা করি তাহলে চলবে না। পৃথিবীতে আপনার দায়িত্ব আপনাকেই পালন করতে হবে। এখানে শুধু আসলাম চৌধুরীর মুক্তি পাওয়া বড় কথা না। গোটা জাতিই তো বন্দী। এই বন্দী দশা থেকে মুক্তি করতে পারলে তো সে নিজেই আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে।
গয়েশ্বর বলেন, ১৪ সালের নির্বাচনটা কেমন হলো? কারও কারও মতে কুত্তা মার্কা। অথচ ১৪০০ ভোট কেন্দ্রে পুলিং এজেন্ট যায় নাই। ভোটের বক্স ভর্তি হয়ে গেছে । তারপর ১৫৩টা সিট আগের থেকে নাই। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে নাই। বিএনপি পারে নাই? ওই পারাটাই শেষ পারা, তারপর কি চেষ্টা করছি আমরা ? কেন করলাম না আমরা। আমরা নেত্রীকে সম্মান করি শ্রদ্ধা করি। তার জন্য আমাদের আবেগ অনুভূতির কোনো অভাব নাই। তো খালেদা যে হাটতে হাটতে জেলে গেলো, আর বন্দী অবস্থায় জেল থেকে গেলেন বাসায় আমরা কি করলাম। আমরা বক্তৃতা আর মুক্তি দাবি করছি কিন্তু কার কাছে করছি? শেখ হাসিনার কাছে? তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনই ঐক্যের কথা বলছি। একটা মানুষ পাইলাম না যে বলছে ঐক্য ছাড়া চলবে। তাহলে আমাদের আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়াতে সমস্যাটা কি? একজনকে দাওয়াত দিলে আরেজন আসবেন না, তাহলে ঐক্য হলো কই? গয়েশ্বর বলেন, আমাদের তাদের ভয় পাবার কোনো কারণ নেই, তাদের যে বিচার হবে সেই বিচার থেকে মুক্তি পাবার কোনো উপায় নেই। আজকে আমরা ভয় পাই কাকে? নিজেকে নাকি সরকারকে? নিজেকে যদি ভয় না পাই তাহলে সরকারকে ভয় পাবার কারণ কি? সরকারের আছে টা কি? একটা পুলিশ। ‘১৯৭১-এ পুলিশ-আর্মি মানুষ মারছে কিন্তু আত্মসমর্পণ করতে হইছে পরে। আর পুলিশ কখনো জনগণের দাবির বিপক্ষে যায় না। আমরাই তো ঠিক মতো রাস্তায় নামতেছি না, পুলিশকে দোষ দিয়ে লাভ কি? সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বন্দী মানে বাংলাদেশটাই বন্দী। তাই আমরা বিএনপি’র কর্মী হিসেবে আমাদের কাজটা আমাদেরকে করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, যারা মনে করছেন আমাদের নামের তালিকা করে মামলা দিবেন জেলে ঢুকাবেন, সাজা দিবেন। আপনাদেরকে বলে দিতে চাই আপনাদের নামের তালিকা হচ্ছে না এই গ্যারান্টি কে দেবে? আপনাদের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকা দিন দিন বড় হচ্ছে। একদিন সময় আসবে বৈশাখ মা?সের হালখাতার মতো একটা একটা করে নাম ধরে সব হিসাব করা হবে। এ সময় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, কৃষকদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান মিয়া সম্রাটসহ আয়োজক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।