পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার দূর থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মা নদী থেকে ৪০টি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে দিনে ৯০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার পূর্বে ও পাইনপাড়া গ্রামের পাশ থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। পাশাপশি অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে জাজিরার কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বালুর কারবারের সঙ্গে জড়িত চক্রটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলী সাংবাদিদের বলেন, পদ্মা সেতু দেশের একটি বড় অবকাঠামো। এর কাছাকাছি জায়গা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ঝুঁকিপূর্ণ। আর নকশা ও সমীক্ষা ছাড়া যে কোনো স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করলে তীব্র ভাংঙ্গনের ঝুঁকি থাকে। বালু ব্যবসায়ী, স্থানীয় মোসারফ হোসেন ও আমির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর পূর্বে পাইনপাড়ার চরটি অবস্থিত। এ চরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবারের বাস করছে। পাইনপাড়া চরটির চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী বেষ্ঠিত। চরের পশ্চিম দিকে পদ্মা সেতু, দক্ষিণে সেনানিবাস, মঙ্গল মাঝির লঞ্চ ও ফেরি ঘাট, উত্তরে ও পূর্বে প্রবহমান পদ্মা নদী। চরটির পশ্চিম দিকে পদ্মা সেতু ঘেঁষে শরীয়তপুরের জাজিরা-শিমুলিয়া নৌ-পথের ফেরি, লঞ্চ ও অন্যান্য নৌ-যান চলাচল করে। দুই বছর ধরে পাইনপাড়া এলাকাটি নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙ্গনে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে গত বছর শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করেছে। পাইনপাড়া চরের উত্তর দিকে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ৪০টি ড্রেজার বসানো হয়েছে। একেকটি ড্রেজার দিয়ে দিনে রাতে ২৪টি বাল্কহেড (বালু পরিবহনের নৌযান) বোঝাই করা হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন ৯০০ এর বেশি বাল্ডহেড বালু দিয়ে বোঝাই করা হয়। একেকটি বাল্কহেডে গড়ে ৯ হাজার ঘনফুট বালু ধরে। সে হিসাবে ৯০০ বাল্কহেডে ৮০ লাখ ঘনফুট বালু ধরে। ওই বালু ঢাকা, মাদারীপুর-মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য ৪০ পয়সা করে নেন। এতে তাঁরা প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ড্রেজারচালক, শ্রমিক ও বালু তোলার সঙ্গে সংশিস্নষ্ট আমিনুল বেপারী, চান মিয়া সরদারসহ কয়েক জন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইনপাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন মাওয়া ও শিমুলিয়া এলাকার জহির ফকির, মতিউর রহমান ওরফে মতি মাদবর, সুলতান মোল্যা, জয়নাল মাদবর, তারা মিয়া, সেলিম দেওয়ান, আলতাফ শেখ, জামাল হোসেন, ফেরদৌস তালুকদার, বাবু ব্যাপারী, আর নাওডোবা এলাকার বাচ্চু মিয়া, রাজু মাদবর, মামুন খান, দেলোয়ার ছৈয়াল, জাকির ছৈয়াল, রাজু মোড়লসহ অনেকেই। জানতে চাইলে মাওয়া এলাকার আব্দুর সোরহাব, মিজানুর রহমান বেপারী বলেন, পদ্মা নদীতে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজ চলছে। এর মালামাল নেওয়ার জন্য চীনা কোম্পানি আমাদের বালু উত্তোলন করতে বলেছে। তবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ড্রেজারের মালিক নাওডোবা এলাকার মামুন খান বলেন, পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর কাছ থেকে আমরা বালু কাটার অনুমতি এনেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই আমরা বালু বিক্রি করছি। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, বিষয়টি আমরা জানি, শনিবার অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজান টাকা জরিমানা করেছি। অভিযান চলমান আছে। জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন কাজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, নদীশাসন প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য চারটি ড্রেজার নিযুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা নদীর যত্রতত্র থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁরা অবৈধভাবে করছেন।