বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
যশোরের মহাসড়কে পিচের বদলে ইটের সলিং বদলগাছীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সদের কর্মবিরতি পালন ফটিকছড়িতে কৃষকের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ মহেশখালীতে যৌথ উচ্ছেদ অভিযান বনবিভাগের মানবসেবা অভিযান ভাঙ্গুড়া শাখা আয়োজিত হুইল চেয়ার, গাছ বিতরণ ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন বগুড়া শেরপুরের যৌন হয়রানির অভিযোগে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন কালিয়াকৈরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে কুলসুম ফেরদৌসী (পুষ্প) তারাকান্দায় অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ সুজনের শার্শা উপজেলা কমিটি গঠন উলিপুরে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন

নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় 

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটসের গোলটেবিলে অভিমত 

নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে যত ভালো ইসি-ই হোক না কেন তার পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। নির্বাচনকালীন প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের কথা শোনে না। একইসাথে এখন প্রশাসনের অবস্থা খুবই খারাপ উল্লেখ করে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৩ বছরে প্রশাসনের সর্বত্র দলীয়করণ কায়েম করেছে। সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় লোকদের বসানো হয়েছে। এখন সরকারি অফিসে গেলে আওয়ামী লীগের কর্মী ছাড়া অফিসার পাওয়া যায় না। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দ্য নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর শাহ আলম প্রমুখ। ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটস এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। আয়োজন সংগঠনের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির বেপারি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সভায় ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গত দুটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে পরের দিন ওই ব্যালট পেপার গুনে ক্ষমতা দখলের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সবার সামনে উঠে এসেছে। এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ নৃ-বিজ্ঞানী আরো বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন আজ পুরোপুরি অনুপস্থিত। গুম, খুন, অপহরণ, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে। বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ ভুলুণ্ঠিত। বিচারের বাণী আজ নীরবে কাঁদছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সীমাহীন বৃদ্ধির কারণে আজ দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। দেশ থেকে লুটেরা গোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। কেউ যেন দেখার নেই। ধীরে ধীরে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য বলেন, হিটলার-মুসোলিনির মতো বাংলাদেশ নিকৃষ্টতর ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। দেশ পরিচালিত হচ্ছে এক ব্যক্তির ইচ্ছায়। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টুস করে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনার হুমকির সমালোচনা করে বলেন, এ বক্তব্য সন্ত্রাসী বক্তব্য। কোনো গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এমন হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানি স্বৈরশাসন থেকে বাচঁতে। আর এখন নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছি। পাকিস্তানের চেয়েও ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে এখন আমরা পৃষ্ঠ হচ্ছি। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবিসহ দেশবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।
ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, যে কারণেই হোক, নির্বাচন কমিশন এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এটি এখন আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই। তাদের আনুগত্য সরকারের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি নয়। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা বর্তমান বাস্তবতায় কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, যারা দিনের ভোট আগের রাতে সম্পন্ন করে ক্ষমতা দখল করেছে, সে দখলদাররা সুষ্ঠু ভোট করবে এটা বিশ্বাস করার কি কোনো কারণ আছে?
মোস্তফা কামাল মজুমদার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইভিএম সব সময় সব দেশে বিতর্কিত। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও ইভিএম নিয়ে আপত্তি আছে। জনগণ যেটি চায় না সরকার সেটি কার্যকর করতে এত মরিয়া কেন? এটা আজ স্পষ্ট যে, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে সে নির্বাচন অবাধ হয় না। ক্ষমতার মধু একবার যে পেয়েছে সে তা জীবনেও আর ছাড়তে চায় না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা বলা থাকলেও দেশে গণতন্ত্র নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা। সে নির্বাচন ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ গণতন্ত্রের চর্চা করতে পারছে না। দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যাচ্ছে। ভোটাররা ভোট দিতে না পেরে ফিরে আসছে। এমনি পরিস্থিতিতে দিনে দিনে ভোটারের সংখ্যা কমছে। বিভিন্ন সময় যেসব নির্বাচন হচ্ছে, তাতে ১০ শতাংশ ভোটও কাস্ট হয় না। রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এবং নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ না থাকায় অনেকেই রাজনীতি থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এটা গণতন্ত্রের জন্য কখনোই শুভ হতে পারেনা। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যেন আবারো ভোটের প্রতি আগ্রহী হয়। সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর এটি সম্ভব কেবল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা এবং নির্বাচনের স্বচ্ছ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com