প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগস্ট মাসে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হচ্ছে। গত সোমবার (৩০ মে) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম অনুমোদনের জন্য অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) ও জাতীয় শিক্ষাবিষয়ক উপেদষ্টা কমিটির যৌথ অংশগ্রহণে এ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সবার সামনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে পাইলটিং চলছে। প্রাথমিকের পাইলটিংও শুরু হবে। পাইলটিং নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এসব বিষয় নিয়ে সার্বিক আলোচনার পর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ), মাদরাসা ও কারিগরি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে। শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিনে পাইলটিং চলা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত জানার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হবে। শিশুদের বিকাশে এ শিক্ষাক্রম সহায়ক হবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) বাস্তবায়ন শেষে আগামী বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমÍদুটোই থাকছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এ পরীক্ষা হবে। এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এছাড়া, নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সে বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকরাই শেখাবেন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দুই মন্ত্রণালয়ের এনসিসিসিতে অনুমোদন দেওয়ার ফলে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ এনসিসিসির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।