পরিবার ও সমাজে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে, উত্তম চরিত্রের ভূমিকা অনন্য। একজন উত্তম চরিত্রবান ব্যক্তিই চাইলে পারেন, একটি সমাজ ও পরিবারকে বদলে দিতে। পারেন অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্ত করে সত্য ও ন্যায়ের পথে ধাবিত করতে। কবি বলেন, যুগ জামানা উল্টে দিতে চাই না অনেকজন, এক মানুষেই আনতে পারে জাতীর জাগরণ।
চারিত্রিক গুণ দিয়েই রাসূল সা: পেরেছেন একটি বর্বর জাতিকে আদর্শ জাতিতে পরিণত করতে। সেজন্য বলা হয়, চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। আর আল্লাহ তায়ালার নিকট ওই ব্যক্তিই উত্তম, যে উন্নত চরিত্রের অধিকারী। (বুখারি-৬০৩৫)
উত্তম চরিত্রের আট দিক
সত্যবাদিতা : উত্তম চরিত্রের অন্যতম একটি সত্যবাদিতা। হাদিসের বাণী, সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। রাসূল সা: বলেন, তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কারণ সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। (জামে তিরমিজি-১৯৭১)
আমানতদারিতা : এটি এক মহৎ গুণ। এই গুণের কারণে রাসূল সা: নিজ স¤প্রদায়ের কাছ থেকে আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশে দিচ্ছেন, আমানতগুলো তার হকদারের কাছে পৌঁছে দিতে। (সূরা আন নিসা-৫৮)
মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার : ‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগি করো। তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ এমন কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহঙ্কারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে।’ (সূরা নিসা আয়াত ৩৬)
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : রাসূল বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (বুখারি – ৫৮৮৪)
অঙ্গীকার পূর্ণ করা : অঙ্গীকার পূর্ণ করার মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাসের আস্থা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে ইসলাম অঙ্গীকার পূর্ণ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। কেননা অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’। (সূরা বনি ইসরাইল-৩৪)
প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার : এটি শুধু উত্তম চরিত্রই নয়, নৈতিক দায়িত্বও বটে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। একই সাথে উত্তম ব্যবহার করো নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীদের সাথেও। সূরা আন নিসা-৩৬)
লজ্জা : লজ্জা কল্যাণের বাহক। লজ্জা মানুষকে অন্যায়-অশীল, পাপাচার থেকে রক্ষা করে। রাসূল বলেন, লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না। (বুখারী-৬১১৭)
দয়া ও করুণা : দয়া ও করুণার মধ্যেই ফুটে উঠে উত্তম চরিত্র। এটি একটি মহৎ গুণ ও ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। কেননা, প্রকৃত মুমিন তো সেই, যে দয়াময়, পরোপকারী ও কল্যাণকামী। রাসূল বলেন, স¤প্রীতি ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো। (বুখারি-৬০১১) লেখক : শিক্ষার্থী, মৌকারা ডিএসএন কামিল মাদরাসা, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা