বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

বাংলাদেশের চোখ বিকল্প ‘পেমেন্ট সিস্টেমে’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ জুন, ২০২২

বিশ্ব এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের কবলে নেই। আর্থিক ব্যবস্থাও এখন আর নিছক ডলার ও সুইফট নির্ভর নয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবর্তিত ডিজিটাল মুদ্রার কল্যাণে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা পাশ কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে চীনা লেনদেনব্যবস্থা সিআইপিএস ও তাদের ডিজিটাল ইউয়ান বিকল্প মুদ্রা হয়ে উঠছে। এছাড়া রুশ সিস্টেম ‘মির’ (এমআইআর) ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের কথা ভাবছে ইরান ও রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। এই ধারাবাহিকতায় সুইফট এর পরিবর্তে হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রস্তাবিত নতুন ‘পেমেন্ট সিস্টেমের’ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ডলার বাঁচাতে আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম সুইফটের বাইরে নতুন কোনো ‘পেমেন্ট সিস্টেমে’ যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সেজন্য হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রস্তাবিত নতুন ‘পেমেন্ট সিস্টেমের’ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কিছু ইনফরমেশন এসেছে, সুইফটের বাইরে নতুন কিছু পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করেছে হংকং ও সিঙ্গাপুর। যেগুলো মাচ মোর কমফোর্টেবল। সেগুলো একটু এক্সপ্লোর করতে বলা হয়েছে। নতুন পেমেন্ট সিস্টেমগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওখানে ছিলেন। উনি ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে বসেছেন। উনাকে কয়েকদিন সময় দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, হংকং থেকে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ডিং তারা নিয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশের জন্য না, তারা বলছে ‘তোমরা যদি আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আস, তাহলে তোমরা যখন এলসি ওপেন করবে, সেই এলসির বিপরীতে আমরা খুবই কম রেট অব ইন্টারেস্টে প্রডিউসারকে পে করে দেব। তারপর তোমরা যখন এক্সপোর্ট (রফতানি) করবে, আইদার তুমি আমাকে ক্যাশে পরিশোধ করতে পার, অথবা তুমি যদি এক্সপোর্ট কর… এগুলো গার্মেন্টসের জন্য খুবই সুবিধা। যখন এক্সপোর্ট করবে তখন আমার যে টাকাটা তোমার এক্সপোর্ট পেমেন্টের, সেটা আমরা কাছে যাবে, আর তোমার একসেস টাকা তোমার দেশে চলে যাবে। তাহলে আমাদের দেশের ডলার ইনটেক রয়ে গেল।’
সিঙ্গাপুর থেকেও এ রকম একটি ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছে। আমি ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যাতে আমরা একটু কমফোর্টলি যেতে পারি। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। রাশিয়াকে সুইফট থেকে বাদ দেয়ায় বিপদে পড়েছে অন্য অনেক দেশও। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যারা রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে, তাদের বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছে।
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হল আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বার্তা আদানপ্রদানের একটি দ্রুত ও নিরাপদ আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম এই পরিষেবার দেখভাল করে থাকে।
১১ মাসে রিজার্ভ থেকে ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি: মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবারও ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ মে) প্রায় ৬০০ কোটি (৬ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৫৩ হাজার কোটি টাকার (প্রতি ডলার ৮৯টাকা) বেশি তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ কম। সে কারণে প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সামাল দিতে সবশেষ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরেক দফা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দফায় এক ধাক্কায় টাকার মান ১ টাকা ১০ পয়সা কমিয়ে সব ব্যাংকের জন্য ডলারের একক দর ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরে ডলার কেনাবেচা করলেও সাধারণ মানুষের কাছে নগদ ডলার বিক্রি করছে সাড়ে ৪ টাকা থেকে ৭ টাকা বেশি দরে। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মঙ্গলবার ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক থেকে ১ ডলার কিনতে লেগেছে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সায়। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ১ ডলার কিনতে লেগেছে ৯৬ টাকা। প্রাইম ব্যাংক নিয়েছে ৯৫ টাকা। খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৯৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অস্থির বাজারে ১৭ মে খোলাবাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে ১০৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ১৮ মে ১০০ টাকার বেশি দরে কার্ব মাকেটে ডলার বিক্রি হয়। ১৯ মে অবশ্য ডলারের দর ১০০ টাকার নিচে নেমে এসে ৯৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৯৬ টাকায় ৩০ পয়সায় বিক্রি হয়। এরপর থেকে কার্ব মাকেটে ডলার ৯৬ টাকা থেকে ৯৮ টাকার মধ্যেই কেনাবেচা হচ্ছে। ওই কয় দিন ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপেক্ষিতে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তব্যাংক কেনাবেচার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংকগুলো অবশ্য আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। ব্যাংকগুলো সোম ও মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ৮৯ টাকা দরে নিজেদের মধ্যে ডলার কেনোবেচা করেছে। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রেও ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা দর মেনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাজারে ডলারের চাহিদা মেটাতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মঙ্গলবার পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের ১১ মাসে মোট ৫৯৫ কোটি (৫.৯৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক । বিভিন্ন সময়ে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার দরে এই ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে।
মঙ্গলবার যে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার ছাড়া হয়েছে তা সোমবার থেকে নতুন বেঁধে দেওয়া দর ৮৯ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছর জুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে বাজার থেকে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়। আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ১০ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com