ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পাহাড়ি উচু লাল মাটি লিচু চাষের খুবই উপযোগী। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সময়ে ফুল আসতে শুরু করে এবং মে মাসের মাঝা মাঝিতে কিছু কিছু দেশীয় প্রজাতির লিচু বাজারজাত আসতে থাকে এবং মে মাসের শেষ সময়ে পুরোদমে লিচু বিক্রি শুরু হয়ে এক মাসের মধ্যেই লিচুর বাজার শেষ। মধু মাসে লিচুর নাম শুনতেই জিভে পানি আসতে থাকে, টসটসে রসালো লিচু, খেতে ভারী স্বাদ, ভরা মৌসুমে লিচু বাজারে পাওয়া যায়, কিন্তু নিজ হাতে গাছ হতে লিচু খাওয়ার মজাই আলাদা, তাইতো ভরা মৌসুমে লিচু বাগান গুলোতে ঘোরার জন্য প্রায় সব বয়সী মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। এলাকার লিচু চাষীরা জানান, লিচুর ভাল ফলনের আশায় লিচু গাছের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকেন, এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। লিচু গাছের জন্য পরিমাণ মতো সার কিটনাশক, এবং সময় সময় গাছের গোড়ায় পানি একান্ত দরকার, সব কিছু ঠিক থাকলে সঠিক মাত্রায় ফলন আশা করা যায়। বৈরী আবহাওয়া ৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা অতিখরা ও অনাবৃষ্টি, শীলা বৃষ্টি এবং পানির উৎস না থাকায় কৃষক লিচু গাছের গোড়ায় প্রয়োজন মতো পানি সর্বরাহ করতে না পাড়ায়, এ বছর লিচুর চামড়া ফেটে অনেক ফল নষ্ট হয়েছে, অনেক কৃষক জানান, লিচু গাছের রোগ বালাই দমনে ভালো মানের কীটনাশক গাছের জন্য খুব দরকার, এলাকার কীটনাক বিক্রেতারা অতি মুনাফার আশায় কম দামের নকল বিষ সর্বরাহ করায় এতে করে গাছের পোকা দমন ও রোগবালাই দুর হচ্ছে না, ফলে গাছ থেকে বিপুল হারে ফল ঝরতে থাকে। আর এসব কারণে কৃষক আশানুরুপ ফল পাওয়া থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। লিচুর ভাল ফলনের আশায় কৃষক বুকবাধে ও লিচু গাছের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকে, এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, সুপ্রাচীন কাল থেকে পাহাড়ি উচু এলাকায় লিচুর আবাদ হয়ে থাকলেও ২০০১ সাল থেকে অত্র এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ শুরু হয়। এরছর উপজেলায় ৪১৪ হেক্টর ভূূমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে পাহাড়পুর ইউপি, বিষ্ণুপুর ইউপি, চম্পকনগর ইউপি ও সিঙ্গারবিল ইউপিতে বেশী আবাদ হয়েছে, তন্মধ্যে শুধু পাহাড়পুরে ২০০ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি লাল বেলে মাটি লিচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, এখানে বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয় থাকে দেশীয়, চায়না ২, চায়না থ্রি, বোম্বাইয়া , এলাচি ও পাটনা, তনমধ্যে চায়না থ্রী ও বোম্বাইয়া জাতের লিচুর আকারে বড়, সুমিষ্ট স্বাদ হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। কলম করা লিচু গাছে ১ বছর পর থেকে লিচুর ফুল ধরতে শুরু করে, কিন্তু ২ বছর ফাক দিয়ে ফল বাজারে তুললে ভাল হয়, একটি লিচু গাছ একাধারে ৪০/৫০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে, লাভজনক ফসল হওয়ায় এর চাহিদা ও আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে বাজার ঘুরে জানাযায় উপজেলার আউলিয়া বাজার ও চম্পকনগর বাজার এর পাইকারী হাট, ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত এ হাট বসে, ছোট-বড় যান নিয়ে ভোর রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা বাজারে চাষীদের লিচু নিয়ে নিয়ে আসার অপেক্ষায় থাকে, পাইকারি লিচু হাজার হিসেবে দাম নির্ধারণ হয়, সাইজে বড় ও সু মিষ্ট হওয়ায় চায়না ৩ ও বোম্বাইয়া এর দাম ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, অন্যান্য লিচুর বাজার দর টাকা ১৮০০ টাকা। খুচরা দামে লিচু ”শ” হিসেবে বিক্রি হয়। খাটিঙ্গা গ্রামের জালাল উদ্দীন বলেন প্রচন্ড খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর লিচুর শাঁস কম হওয়ায়, আকারে ছোট হয়েছে। পাহাড়পুর ইউপির প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটা বাড়িতে লিচু গাছ দেখা যায়। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাব্বির আহমেদ জানান, বৈরী আবহাওয়াতেও এবছর লিচুর ভাল ফলন হয়েছে, লিচু চাষীদের সার, রোগবালাই, কীটনাশক,বাজার ইত্যাদি সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ, পরিপক্ষ একটি গাছ থেকে লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করা যায়, সব মিলিয়ে লিচু লাভ জনক ফল, উত্তরোত্তর এর চাহিদা বাড়ছে। কাঙ্খিত ফলনে কৃষকের খুশিতে আমরা ও খুশি।