‘অনন্ত যৌবন’ লাভের আশায় কৃষাণ নকিম উদ্দিন মোল্লাকে (৬০) নৃশংসভাবে খুন করেন লিটন মালিতা (৪০)। কথিত কবিরাজ আব্দুল বারেকের (৬৩) পরামর্শে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছেন গ্রেফতার লিটন। বৃহস্পতিবার (২ জুন) বেলা ১১টায় যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, গত ৩০ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রাম থেকে পুরুষাঙ্গ কাটা এবং ডান চোখ উপড়ানো অবস্থায় নকিম উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. মাজহারুল ইসলাম বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা (নম্বর-১৮/৩১.০৫.২০২২) দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
তিনি আরও জানান, মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম যশোর, মাগুরা ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেন। ১ জুন তারা মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানাধীন চর ঘিওর মাঠে কৃষাণ সেজে লিটন মালিতাকে গ্রেফতারে সক্ষম হন।
পরে লিটনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি খড়ের গাদার (বিছালি) ভেতর থেকে নকিম উদ্দিনের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা পুরুষাঙ্গ, অ-কোষ ও চোখের মণি উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে তার দেওয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানাধীন লোকনাথপুর থেকে তান্ত্রিক কবিরাজ আব্দুল বারেককেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার লিটন মালিতা জানিয়েছেন তিনি বৈবাহিক জীবনে অসুখি। গত ৮ বছর ধরে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার এক পর্যায়ে কবিরাজ জানায়- যদি কোনও পুরুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এনে দিতে পারেন তাহলে তিনি ‘অনন্ত যৌবন’র অধিকারী হবেন। এ কারণে রিকশাচালক, কখনও কৃষিশ্রমিক, কখনও দিনমজুর হয়ে কাজ করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন লিটন। কিন্তু তাদের হত্যা করে শরীরের ওইসব অঙ্গ সংগ্রহ করতে পারেননি। সর্বশেষ নকিম উদ্দিনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর অঙ্গগুলো সংগ্রহ করেন। তবে অভিযানে গ্রেফতার কবিরাজ আব্দুল বারেক জানিয়েছেন, লিটনকে তিনি তিনটি অঙ্গ সংগ্রহ করতে বলেছেন। কোনও জীবিত মানুষকে হত্যা করে অঙ্গ আনতে বলেননি। যেখানে পোস্টমর্টেম হয়- সেখান থেকে যেন অঙ্গগুলো ম্যানেজ করে সে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে লিটন পুলিশকে জানিয়েছে যৌবন শক্তি বৃদ্ধির কথা বলে কবিরাজ তাকে যৌন নির্যাতন করেছে। একইভাবে কবিরাজের নির্দেশে সে নিজেও বহু পুরুষকে নির্যাতন করেছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে তান্ত্রিক কবিরাজির বিভিন্ন সরঞ্জাম, দুটি মোবাইলফোন সেট এবং হত্যাকাজে ব্যবহৃত রশি ও চাকু উদ্ধার করেছে।