গোপালগঞ্জ। নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরো বাংলাদেশ। কারণ, এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থানও গোপালগঞ্জ। দেশ স্বাধীনের আগে এখানকার অধিকাংশ মানুষ ছিলেন দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের। তাই, দেশ গঠনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু জন্মস্থানের উন্নয়নেও মনোনিবেশ করেছিলেন, যা এখনো চলমান রয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর থমকে যায় উন্নয়নের যাত্রা। ফলে আর্থ-সামাজিক, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে পড়ে জেলাটি। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় পালা বদল। ২০০৮ সাল থেকে গত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নয়নের মাঝে রাজধানীর ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগে দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পদ্মা নদী। গোপালগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল এ অ লের সাধারণ মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরী পার হয়ে যেতে হতো ঢাকায়। তবে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত গোপালগঞ্জে জেলার সাধারণ মানুষ। গোপালগঞ্জে ব্যপক উন্নয়ন হলেও পদ্মা সেতুর কারণে এ অ লে গড়ে ওঠেনি কোন শিল্প কল কারখানা। ফলে এ জেলায় রয়েছে বেকারত্বের চাপ। এ সেতুর উদ্ধোধন হলে এ অ লে গড়ে উঠবে শিল্প কল কারখানা। এতে একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে অন্য দিকে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কমবে বেকারত্বের চাপ। এছাড়া সড়ক যোগাযোগে কমে আসবে ভোগান্তি। নির্বিঘেœ কোন ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকায় পাড়ি জমাবে গোপালগঞ্জের মানুষ। জানা গেছে, উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতুর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। সেতুজুড়ে চলছে রেলিংয়ের পাশাপাশি ল্যাম্পপোস্টের স ালন লাইন, দুই পাড়ে সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ৷ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে গত সোমবার (২৩ মে) বিকালে। এর আগেই মূল অংশের পিচ ঢালাই কাজের শেষ হয়। কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই কাজ শেষ হয়। আগামী ২৫ জুন সেতু খুলে দেয়ার খবরে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের জেলা গোপালগঞ্জের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা সুশান্ত সাহা বলেন, রাজধানী ঢাকায় যেতে আমাদের পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি হলে ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে গলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতুর উদ্ধোধন হলে আমাদের আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। পদ্ম সেতুর উদ্বোধন হবে “এই ভালো লাগা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়”।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন-তারিখ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। এখন আমরা নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যেতে পারবো। এতে আমাদের ভোগান্তি কমে যাচ্ছে।
অ্যাভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতু হলো সমগ্র বাঙালী জাতির স্বপ্নের সেতু। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের সাধারণ মানুষের স্বপ্নের ও প্রাণের সেতু পদ্মা সেতু। এ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে অনেক প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আমরা রাজধানী ঢাকাতে যাতায়েত করবো। এতে আমাদের সময়ের সাশ্রয় হবে। অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে। কাঁচা মালসহ মালামাল পরিবহনে সুবিধা হবে। সেতু উদ্ধোধনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়া আমারা অনেক খুশি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করায়। গোপালগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট এম জুলকদর রহমান জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার করার পর ৭৫ পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের জেলা গোপালগঞ্জ সব দিকে থেকে নিগৃহিত হয়েছে। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়ন চলছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ যখন বন্ধ হতে বসেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ও সাহসিকতার মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা সেতু তৈরি করেছেন। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। যা সারা দেশ বলতে বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মানুষের জন্য একটি মাইল ফলক।
সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস্কেন্দার আলী বলেন, আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করেছে। দেশীয় অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে ২৫ জনু উদ্ধোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা আজ আনন্দে আত্মহারা। পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের পর দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মানুষের অর্থনেতিক উন্নয়ন সুচিত হবে। গোপালগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জৈষ্ঠ্য সংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্না বলেন, পদ্মা সেতু গোপালগঞ্জ জেলার মানুষের কাছে স্বপ্নের মত ছিল। যা আজ বাস্তবে পরিনত হয়েছে। এ সেতুর উদ্বোধনের ফলে এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এ অ লে শিল্প কল কারখানা স্থাপন হবে। চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব দূর হবে। এ সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করায় এ অ লের মানুষ খুবই আনন্দিত।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ২৫ জনু পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত, গর্বিত। বহু চড়াই উৎরাই ও প্রতিকূলতা পেড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। আমরা শেখ হাসিনার জন্য গর্বিত। পদ্মা পাড়ের ১৭টি জেলার তিন কোটি মানুষ যোগাযোগের সুবিধা পাবে, অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে। এ জেলায় শিল্পা ল গড়ার সুবিধা হবে। এ জন্য গোপালগঞ্জবাসি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।