বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

খাদ্য সঙ্কট নিরসনে ইসলামের নির্দেশনা

আবদুল্লাহ আল মামুন:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ জুন, ২০২২

খাদ্য। মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। খাবার ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব কল্পনা করাও কষ্টকর। সুস্থ ও নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য উত্তম ও পরিমিত খাবার দাবারের বিকল্প নেই। খাবারে সঙ্কট দেখা দিলে, খাদ্যাভ্যাসে এলোমেলো অবস্থা তৈরি হলে আমাদের যাপিত জীবনে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কোনো কিছুতেই মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। মানবজীবনের মৌলিক অপরিহার্য এই দিকটিতে স্বভাবধর্ম ইসলামের রয়েছে অসাধারণ কার্যকরী নির্দেশনা। সুস্থ দেহ ও প্রাণ নিয়ে তৈরি হয় পূর্ণাঙ্গ মানুষ। তাই সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন দেহ ও প্রাণের উপযুক্ত খাবার। আত্মার পরিচর্যার মাধ্যমে যেমন সুস্থ মন-মস্তিষ্ক গড়ে ওঠে, তেমনি পর্যাপ্ত খাবারের মাধ্যমে দেহ হয়ে ওঠে সজীব ও সবল। আল্লাহর বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে দানা বাঁধে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হিংসা, ভয়, লোভ-লালসা ছাড়াও আত্মার অন্যান্য রোগব্যাধি। তাই ইসলামে রুগ্ন আত্মার যেমন প্রতিষেধক আছে, তেমনি সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আছে খাবারের সুশৃঙ্খল নীতিমালা। আত্মা ও দেহ রুগ্ন হয়ে উঠলে মানুষ হারিয়ে ফেলে নিজের আসল পরিচয়। জীবন হয়ে ওঠে মরীচিকাময়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জীবন হবে সঙ্কীর্ণ ও অস্থির, আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ করে পুনরুত্থিত করব।’ (সূরা ত্বহা-১২৪)
ইসলামপূর্ব যুগে মরুবেষ্টিত মক্কায় নিরাপদে খাদ্য আমদানি আল্লাহর বিশেষ রহমতস্বরূপ ছিল। আর মানবজীবনে খাদ্য ও ভৌগোলিক নিরাপত্তার গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব তারা যেন এই গৃহের মালিকের ইবাদত করে, যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে তাদের নিরাপদ করেছেন।’ (সূরা কুরাইশ-৪)
পৃথিবীতে মানব বসতি গড়ে উঠার পর থেকে খাদ্যের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে। তাই যেকোনো স্থানে বসবাসের উপযুক্ততা নির্ভর করে খাদ্যের পর্যাপ্ততার ওপর। প্রাচীনকাল থেকে খাদ্যের অভাব পূরণে গড়ে ওঠে কৃষিব্যবস্থা। আর চাষাবাদের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে মজবুত অর্থনীতি। চাষাবাদের মাধ্যমে খাদ্যের অভাবের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ইসলামে। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম গাছ রোপণ করলে বা চাষাবাদ করলে, তা থেকে কোনো মানুষ বা জীবজন্তু আহার করলে তার জন্য এটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম-১৫৫২)
মানবসভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে কৃষিব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে। খাদ্যের মানোন্নয়ন, উৎপাদন, সরবরাহ বৃদ্ধি ও সার্বিক নিরাপত্তায় নিত্যনতুন কাজ করা অতীব জরুরি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠকে অধীন করেছেন, অতএব তোমরা এর ওপর চলাচল করো এবং তাঁর প্রদত্ত রিজিক গ্রহণ করো, তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সূরা মুলক-১৫) খাবারসহ যেকোনো বস্তু ব্যবহারে অপচয় পরিহার অপরিহার্য। অপচয়ের মাধ্যমে জীবনে নেমে আসে অধঃপতন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো, অপচয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ-৩০)
খাবার দেহের প্রয়োজন অনুপাতে গ্রহণ করা জরুরি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম নীতিও এটি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মানুষ নিজের পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো বস্তু ভর্তি করে না। সে চাইলে শুধু প্রয়োজন পূরণে পেট ভর্তি করতে পারে। আবার চাইলে সে পেটের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করবে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ পানি পান করবে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য বাকি রাখবে।’ (তিরমিজি-২৩৮০)
খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সূরা ইউসুফে ইউসুফ আ:-এর গৃহীত পদক্ষেপ ছিল ইতিহাসের যুগান্তকারী একটি ঘটনা। তৎকালীন মিসরের বাদশাহর স্বপ্নযোগে দেখা দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে তিনি এক অনবদ্য নীতিমালার উদ্ভাবন করেন। ওই সময়ে পরিকল্পিতভাবে পর্যাপ্ত চাষাবাদের মাধ্যমে আসন্ন খাদ্যের ঘাটতি ও অভাব দূর করেছিলেন তিনি। তাঁর উদ্ভাবিত খাদ্যের জোগান, ব্যবহার ও সুষম বণ্টননীতি আজো অনুসরণযোগ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষ করবে, আর ফসল কাটার সময় খাওয়ার সামান্য পরিমাণ ছাড়া বাকিগুলো শীষের ভেতরে রাখবে। এরপর কঠিন সাত বছর আসবে, তখন মানুষ তোমাদের জমা করা খাবার খাবে, তবে এর থেকে সামান্য তোমরা সংরক্ষণ করবে।’ (সূরা ইফসুফ : ৪৭-৪৮)
খাদ্য সঙ্কটসহ সব ধরনের সঙ্কট নিরসনে কুরআনের মৌলিক দুটো মূলনীতি অনুসরণের বিকল্প নেই। আর সে মূলনীতি দুটো হচ্ছে ‘ঈমান ও তাকওয়া’। ইরশাদ হয়েছে-‘আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নিয়ামতসমূহ উন্মুুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সূরা আরাফ-৯৬) অধুনা বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট খাদ্য সঙ্কট নিরসনে ইসলামের দৃপ্ত নির্দেশনাবলি অনুসরণ এখন সময়ের দাবি। বিশেষত মানবজাতি যদি তাদের স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাকওয়ার পথে অগ্রসর হয় তাহলে তাদের যাপিত জীবনজুড়ে শান্তি আর সফলতার ফল্গুধারা বইবে নিঃসন্দেহে। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম, টঙ্গী গাজীপুর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com