ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক লেখা লিখেছেন অং সান সুচি। বিভিন্ন জায়গায় সেটা প্রকাশও হয়েছে। তারপও নোবেল কমিটি সেগুলো কেন দেখেনি! তিনি বলেন, বৌদ্ধ মৌলবাদের সঙ্গে অন্য যে কোনো ধর্মের মৌলবাদের কোনো পার্থক্য নেই। এমনকি এরকম একত্ববাদের রাজনীতি শ্রীলঙ্কা ও ভারতেও দেখা যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার (৮ জুন) ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন: প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার ১৩৫টি এথনিক কমিউনিটি (নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী) স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গাদেরকে তারা স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মিয়ানমার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হয়েছে। যেমন মিয়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে তাদের উপস্থাপনার কোথাও রোহিঙ্গাদের বেঙ্গলি, অবৈধ অভিবাসী বলে উল্লেখ করেনি। বরং তারা তাদেরকে আরাকানিজ মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা যেহেতু আরাকানিজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার মানে তাদেরকে আরাকানে চলে যেতে হবে, এটা একটা অর্জন। তিনি বলেন, আরও একটা অর্জন হচ্ছে ইন্ট্যারনাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের প্রভিশনাল রায়েও রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে সারাবিশ্বের বিচারকদের সঙ্গে মিয়ানমারের বিচারকও রয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, জেনোসাইড এবং গণহত্যা এক নয়। জেনোসাইড একটি জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মকে ও গেষ্ঠীকে পুরোপুরি ধ্বংসের লক্ষ্যে করা হয়ে থাকে। এসময় রেহিঙ্গাদের নিয়ে সিভিল এনটিটি তৈরি করার কথা বলেন তিনি। যাতে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ইন্ট্যারনাশনাল কমিউনিটির কাছে তাদের দেশে ফেরার জন্য কথা বলতে পারেন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের উচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা। কারণ তারা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলও। অন্যদিকে অং সান সুচি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলে আছেন। দর কষাকষির এখনই সময়ভ কারণ, মিয়ানমার জান্তা সম্প্রতি তাদের ১৫শ নাগরিককে হত্যা করেছে। আর যখন একটা দেশ তাদের নাগরিককে হত্যা করে, তাতে বুঝতে হবে যে তারা এখন দুর্বল অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে সিঙ্গাপুরের ও চীনের। এছাড়া তারা সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এসব দেশের সঙ্গে কোয়ালিশন করতে হবে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য।
গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নাছিমা বেগম বলেন, রেহিঙ্গাদের অন্য দেশে স্থানান্তরের চাইতে নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমদের যেরকম সম্পর্ক আছে, ঠিক সেরকমভাবে মিয়ানমারের শিক্ষক-সাংবাদিকদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যাতে সার্বিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায়। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিঞা মো. মাইনুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।