কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হলেও অতিরিক্ত মজুরি কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা কৃষকদের। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায, চলতি মৌসুমে দাউদকান্দি উপজেলায় ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সোমবার (৭ জনু) পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সামনে রেখে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। এ সুযোগে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন শ্রমিকরা। দৈনিক ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। তাতেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা বলছেন, মাঠভর্তি সোনালি ফসল থাকলেও দুশ্চিন্তা হচ্ছে। প্রতি বছর’ই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে শ্রমিকের মজুরি। এবার তা আকাশছোঁয়া। এক একর জমির ধান কাটতেই শ্রমিক মজুরি জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। যে কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। তবে শ্রমিকরা বলছেন ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ পরিশ্রম হচ্ছে, এজন্য হাঁকা হচ্ছে বেশি দাম। এদিকে এমন সংকটের সময় আশার আলো দেখিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ফলে বিভিন্ন কোম্পানির কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যাপক চাহিদা ও প্রচলন শুরু হয়েছে এই উপজেলায়। উপজেলাজুরে ৪টি কম্বাইন হারভেস্টার কাজ করছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। ৫০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকিতে সহজ কিস্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হারভেস্টার কিনে লাভের মুখ দেখেছেন ক্রেতারাও। এ মেশিন দিয়ে মাত্র এক ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কেটে মাড়াই, ছাঁটাই ও বস্তাভর্তি করা যায়। খরচ মাত্র সাত হাজার টাকা। যেখানে এ কাজের জন্য পাঁচজন শ্রমিকের পাঁচদিন সময় লাগতো। মজুরি দিতে হতো ১৫ হাজার টাকার মতো। স্বল্প খরচে সময় বাঁচাতে তাই সবাই ঝুঁকছে কম্বাইন হারভেস্টারে। উপজেলার বিটেশ্বর ইউনিয়নের আমদাদ মিয়া বলেন, শ্রমিকের দাম অনেক। তাই হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটালাম। রোদ থাকায় এক একর জমির ধান কাটতে সময় লেগেছে মাত্র এক ঘণ্টা। ধান কাটার পর মাড়াই, ছাঁটাই ও বস্তাভর্তি করাসহ খরচ পড়লো মাত্র সাত হাজার টাকা। তাই শ্রমিকের ওপর ভরসা না করে হারভেস্টারে ঝুঁকছে কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে এ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ পর্যন্ত ৯৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি জমিগুলোর ধানকাটা সম্পন্ন হবে। দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারওয়ার জামান জানান,উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।বর্তমানে প্রায় ইউনিয়নেই হারভেস্টিং মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে এতে কৃষকের সময় ও ফসল চাষাবাদে অনেকটাই সাশ্রয় হচ্ছে।