ওই দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ, ওই খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা’ গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক,কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রতিটি এলাকায় তালগাছগুলোতে এখন কচি তালে ভরে গেছে। মধুমাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আটি। গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। তাই জৈষ্ঠ্যের এ মধুমাসে বাজারে নানা ফল ওঠলেও দাউদকান্দিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তালের শাঁস। সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তালের শাঁস বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। উপজেলার শহীদনগর বাস স্ট্যান্ড বাজারের তাল শাঁস বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালাই। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করি। তবে গাছ উঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। তিনি জানান, বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্যের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১০০থেকে ১৫০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে প্রতিদিন তার ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। ক্রেতারা জানান, এখন গরমের সময় রসালো এই ফল খুবই উপকারী ও সুস্বাদু। প্রচন্ড গরমে এ ফল শরীরের জন্য অনেক ভালো। উপজেলার বিটেশ্বর ইউনিয়নের বয়োজ্যেষ্ঠ আলী হোসাইন জানান আম ও লিচুসহ মৌসুমি অন্য ফলের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু তালের শাঁসে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে ভেজালমুক্ত তাল শাঁসের কদর বেশি। গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার তাল ব্যবসায়ী মুজাফফর হোসেন বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে শাঁস সংগ্রহ করে এখানে এনে বিক্রি করি। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এ সময়ে আমরা তালের শাঁস বিক্রি করে থাকি। গরমের এ দিনে তালের শাঁস বিক্রিও হয় ভালো। বেশ চাহিদাও রয়েছে। পাশাপাশি দামও ভালো রয়েছে। সারাদিনে ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করে আমার ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মুনাফা হয়। কথা হয় মলয় বাজারের তাল ব্যবসায়ী মিজান মিয়ার সাথে। এ তাল ব্যবসায়ী বলেন, তাল গাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হয়। একটি গাছে ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিক্রি শুরু হয়, চলে পুরো মাস জুড়ে। মলয় বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তালের শাঁস কিনতে আসা জাহিদ হাসান,সোহাগ আহম্মেদ, দীপু মিয়া, পলাশ মিয়া বলেন, এটি সুস্বাদু ফল। প্রচ- গরমে তালের শাঁস খেতে ভালোই লাগে। তাইতো তালের শাঁস কিনতে এলাম। জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গৌরীপুরের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ বি সি সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং কঁচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।