সিলেটে আবার বন্যায় ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও বাসা বাড়ি স্কুল প্রতিস্টান পানি ঢুকছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি। গতকাল ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আবারও একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। গত কয়েক দিনের মতো গতকাল ভোর থেকেও অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে আজ সকাল নয়টায় ১৩ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে আজ সকাল নয়টার দিকে সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১১ সেন্টিমিটার ওপরে। এখনো তা অব্যাহত আছে। এমনটা থাকলে পুনরায় বন্যার আশঙ্কা আছে। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন আছে। নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় এসব ইউনিয়নের ১৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৬টি ইউনিয়নেরই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। উপজেলা পরিষদ, থানাসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের অধিকাংশ দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ রোড, থানা রোড ও ভূমি অফিস রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়কে নৌকা দিয়ে মানুষজন চলাচল করছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে, আসছে। এটি ছাড়া বাসাবাড়িতে পানি পানি যাওয়ায় মানুষজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।
পানি বাড়তে থাকায় স্থানীয় লোকজন পুনরায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে ভোগার আশঙ্কা করছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং খবরপত্রকে বলেন, গত কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া বন্যা পরিস্থিতির চেয়েও এখন পানি বেশি এসেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটসহ অসংখ্য স্থাপনা তলিয়ে গেছে। তবে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ কমাতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ উপজেলার ২৬৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ২০০টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আজ সকালে পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যাকবলিতদের ভোগান্তি সাধ্য অনুযায়ী নিরসনেও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। এর আগে গত ১৪ মে থেকে সিলেট নগরসহ ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানায়। প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বন্যার আশঙ্কায় মানুষ চিন্তিত। সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা, পানিবন্দী ১০ হাজার মানুষ টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে ফের দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৫ জুন) সকালে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজারসহ চারটি উপজেলার নি¤œাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার সহ ৪ টি উপজেলার মানুষ। ঘরের ভিতরে পানি উঠে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। অনেকে আবার টিনের বড় ড্রাম গুলোকে নৌকা হিসেবে ব্যবহার করে সেগুলো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। শুধু তাই নয় বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বানের পানিতে ডুবে গেছে। এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সাহেব বাড়ি ঘাট, উত্তর আরপিন নগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া এলাকার রাস্তাঘাট বানের পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে।পানিবন্দি লোকজন জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি ঘরের ভেতরে থাকায় রান্নাবান্না করার সুযোগও নেই। চুলাও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ইতিমধ্যে ২০ মেট্রিক টন করে খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন।