১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম বাগানের যুদ্ধে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লা (১৭৩২-১৭৫৭) কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রের কারণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়। ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয় ও মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে ইংরেজ-শাসনের সূচনা হয়।
পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজদৌল্লা ও বাংলার ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা তো আমরা কিছুটা জানি, কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল? প্রিয় পাঠক আপনারা জেনে একটু অবাক হবেন যে যুদ্ধ পরবর্তীকালে এই বিশ্বাসঘাতকদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল।
প্রায় সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল মর্মান্তিকভাবে।
মীর জাফর: বশ্বাসঘাতকদের সর্দার মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফ মাথায় রেখে নবাবের সামনে তার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করবার পর পরই বেঈমানী করেছিল। তার জামাতা মীর কাসেম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। পরবর্তীতে তিনি দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ভবিষ্যতে আমি বাংলা অভিধানে বিশ্বাসঘাতকের সমার্থক শব্দ হিসেবে মীরজাফর দেখলে মোটেও অবাক হব না।
জগৎ? শেঠ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ:মীর কাসেম তদের হত্যা করে। জগৎ? শেঠকে দূর্গের চূড়া থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়। পলাশীর যুদ্ধের শেষে মীরজাফর ও লর্ড ক্লাইভের সাক্ষাৎ?, ফ্রান্সিস হেম্যান (১৭৬২)
রায় দূর্লভ:যুদ্ধের পর তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
উমিচাঁদ:যুদ্ধের রবার্ট ক্লাইভ কর্তৃক প্রতারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং উন্মাদ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তার মৃত্যু ঘটে।রাজা রাজবল্লভ: পদ্মায় ডুবে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
মীর কাসেম: মীর জাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। পরবর্তীতে ইংরেজদের সাথে তার বিরোধ বাধে ও বকসারের যুদ্ধ পরাজিত হন। পরে ইংরেজদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান এবং অজ্ঞাতনামা অবস্থায় দিল্লীতে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। তার মাথার কাছে পড়ে থাকা একটা পোঁটলায় পাওয়া যায় নবাব মীর কাসেম হিসেবে ব্যবহৃত চাপকান। এ থেকেই জানা যায় মৃত ব্যক্তি বাংলার ভূতপূর্ব নবাব মীর কাসেম আলী খান।
ইয়ার লতিফ খান: তিনি যুদ্ধের পর হঠাৎ? করে নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যান। ধারণা করা হয়, তাকে গোপনে হত্যা করা হয়েছিল।
মহারাজা নন্দকুমার: তহবিল তছরুপ ও অন্যান্য অভিযোগের বিচারে নন্দকুমারের ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যু হয়েছিল।
মিরন: মীর জাফরের বড় ছেলে মিরন। অসংখ্য কুকর্মের নায়ক এই মিরন। ইংরেজদের নির্দেশে এই মিরনকে হত্যা করে মেজর ওয়ালস। তার এই মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইংরেজরা বলে বেড়ায় যে বজ্রপাতে মিরনের মৃত্যু ঘটে।
ঘষেটি বেগম: মিরনের নির্দেশে নৌকা ডুবিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
মুহাম্মদী বেগ: নবাব সিরাজদৌল্লার হত্যাকারী। কথিত আছে মৃত্যুর সময় নবাব তার কাছ থেকে দুই রাকাত সালাত আদায় করার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু কুখ্যাত মুহাম্মদী বেগ সেই দাবী প্রত্যাখ্যান করে নবাব সিরাজকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তী পর্যায়ে মুহাম্মদী বেগ মাথা গড়গড় অবস্থায় বিনা কারণে কূপে ঝাঁপ দেয় এবং মৃত্যুবরণ করে।
দানিশ শাহ বা দানা শাহ: অনেকে বলে, এই ফকির নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিল। আসকার ইবনে শাইখ তার ‘মুসলিম আমলে বাংলার শাসনকর্তা’ গ্রন্থে লিখেছেন, বিষাক্ত সাপের কামড়ে দানিশ শাহর মৃত্যু ঘটেছিল।
রবার্ট ক্লাইভ: পলাশী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কোটি টাকার মালিক হন। ইংরেজরা তাকে ‘প্লাসি হিরো’ হিসেবে আখ্যায?িত করেন। এই রবার্ট ক্লাইভ দেশে ফিরে গিয়ে একদিন বিনা কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় নিজের হাতেই ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করে।
ওয়াটস: মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় বিদেশের মাটিতেই হঠাৎ? মৃত্যুমুখে পতিত হন। স্ক্রাফটন: বাংলার বিপুল সম্পদ চুরি করে বিলেতে যাবার সময় জাহাজডুবে তার অকাল মৃত্যু ঘটে। ওয়াটসন:ওয়াটসনের ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানী হলে কোনো ওষুধেই ফল না পেয়ে কলকাতাতেই করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন।