বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

মুন্সীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিস: দালালদের মাধ্যমে জমা দিলে ভোগান্তি নেই!

হুমায়ুন কবির মুন্সীগঞ্জ :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

চরম ভোগান্তিতে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। আর এই ভোগান্তির শেষ কোথায় কেউ জানেননা। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বর্তমান সেবা দিতে না পারার সংকটের ও অভিযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জনগণের জন্য সাধারণ পাসপোর্ট দিয়ে তাদের কাজ শুরু হয়। তার পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট শুরু হয়। উন্নত দেশগুলোর মতোই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়ার চিন্তা করে সরকার। সেই রূপায়ণই হচ্ছে ২০২০-এর ২২ জানুয়ারি চালু হওয়া ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট)। কিন্তু কিছু অসাধু অফিসের লোকজনের কারণে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা লোকদের চরম ভোগান্তিতেপরতেহচ্ছে।একজনপাসপোর্ট দালালজানান, ২০০ দালালরয়েছেপাসপোর্ট অফিসের স্টাফদের। এডির মাধ্যমে কোন পাসপোর্ট করি না। পিয়ন, দাড়োয়ান থেকে শুরু করে সকলেই এই দালালদের সাথে জড়িত। যে সকল দালালদের মাধ্যমে ১০টি করে পাসপোর্ট জমা দেয়া হয়। সবচেয়ে বেশী পাসপোর্ট জমা নেয়া হয় শরীফ প্লাজার দু’জন দালাল থেকে। স্টেডিয়াম মার্কেটে, কলেজ পাড়া মার্কেটের প্রত্যেকটি কম্পিউটার দোকান থেকে ১০টি করেপাসপোর্ট নেয়া হয়। এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে জানান বিভিন্ন দালাল। জেলা খানা রোড, শিশু পার্কের সামনে, কোর্ট চত্বরের সামনে, কলেজপাড়ার প্রত্যেকটি কম্পিউটারের দোকান, সচিব, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণও পাসপোর্টের দালালি করে থাকেন রলে জানা যায়। দালালদের বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে । যে সাংকেতিক চিহ্নহের বিষয়ে অফিসের দারোয়ান থেকে শুরু সকল কর্মকর্তাই ওয়াকি বহাল। ঐ চিহ্ন দেখলে কোন সমস্যা নেই। ফাইল ছেড়ে দিবেন এবং পরবর্তীতে এই ফাইল গুলোর টাকা বুঝেনিবেন রাতের যে কোন সময়। বিকাশের মাধ্যমেও লেন দেন হওয়ার খবর রয়েছে। একটি সংকেতিক চিহ্ন হলো চউই, মর্ডান কম্পিউটার, মা কম্পিউটার। যাদের ভিজিটিং কার্ডে লিখা অনলাইনেই-পাসপোর্ট, গজচ পাসপোর্ট আবেদন করা হয়। এমনকি চালান ফরমেও একটিসিল দেয়া হয় আইটি সেন্টার নামের। এই সিলের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশীপাসপোর্ট ফাইলজমা দেয়া হয়। এই দালাল শ্রীনগর উপজেলার পাসপোর্টসহ যে কোন এলাকার পাসপোর্ট করিয়ে দেন। নামের বানান ভুল; নামেরআগে মোহাম্মদ, মো. মোহা. ইত্যাদি; বয়স সমস্যা, বয়স সংশোধন সমস্যা, জন্ম সন, নতুন জন্ম সন ইত্যাদি; এমআরপি পাসপোর্টের জন্ম সন আর নতুনই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন কৃত জন্ম সন এক না হওয়া; জাতীয় পরিচয় পত্রের সঙ্গে নামের বানান, জন্ম সন, ঠিকানা ইত্যাদি পাসপোর্ট প্রদানের প্রধান অন্তরায়। এই সুযোগকাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু অফিসার একেকটি পাসপোর্ট থেকে হাতিয়েনিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে সংশোধনের কোন পাসপোর্টই দেয়া হয়না। ১০, ২০, ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়েনি চ্ছে দালাল চক্র। দালাল চক্রের মাধ্যমে যদি সংশোধনেরজন্য ই- পাসপোর্ট আবেদন করা হয় তবে সেই পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব। যদি দালাল চক্রের মাধ্যম ছাড়া আবেদন করা হয় সেটার মধ্যে অনেক ভুলধরিয়ে আবেদন বাতিল করা হয় এবং ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পাসপোর্ট প্রত্যাশি আবেদন করার পরে এক বছরেও পুলিশ ভ্যারিকেশনে পাঠানো হয় না। সেবাটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার আশা ও চেষ্টার পরিণতি আজকের এই ভোগান্তি। সরকারের সেই আশা করাটাছিল অবশ্যই দক্ষিণএশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্ট সেবায় উত্তরণের জন্য যে প্রযুক্তিগত দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য জন বল প্রয়োজন, সে বিষয়টি তারা ভুলে গিয়ে ছিলেন। বলাযায়, এ নিয়েতাদের কোনো চিন্তাই ছিল না। দক্ষ জনবলের অভাবে এখনই-পাসপোর্ট পাওয়া হয়ে উঠেছে এক ভোগান্তিরনাম। সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যেই ভোগান্তি ছাড়া নাগরিকরা এ পাসপোর্ট পাবেন। অথচ সে আশাবাদ আজ গুড়ে বালিতে পরিণত হয়েছে। এখনই-পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের। নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারছেনা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন করতে গিয়েও দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকের বিদেশ যাত্রাও বাতিল হচ্ছে। চিকিৎসারজন্য রোগী ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক কাজে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। পাসপোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন হজ ও ওমরা গমনেচ্ছুরাও’। পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতিমুক্ত ও টাউট-বাটপাড় মুক্ত করার যে কথা আমরাশুনি, তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো যেত-যদি দালাল চক্রের অদৃশ্য হাত সক্রিয়না থাকত। উঁচুস্তরের কর্মকর্তারা যথেষ্ট সেবা দানে কর্মব্যস্ত। কিন্তু নি¤œস্তরের (করণিক স্তর) লোকজন সেবাদিতে গড়িমসি, ঢিলেমি, ফাইল না পাওয়া অথবা ফাইল গায়েব, হারিয়ে ফেলা, কিছু পাওয়ার আকাঙ্খায় বেহুদা বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে বিব্রত করে তাদের সেবাদানে অনীহাকেই প্রমাণ করে। এক দালাল নামনা বলাশর্তে জানান, আমাদের দালালীর ভাগ আমরাই অফিসে যার যার অফিস বসকে দিয়ে থাকি। এই পাসর্পোট আফিসের এডি ছাড়া দারোয়ান হতে শুরু করে সকল স্টাফই দালাল লালন পালন করে থাকেন। যেমন ৫৭৭৮ (ডেলিভারি টোকেন) জরুরী মানিরিসিট ভুল করে অফিস স্টাফ আবার অফিস বন্ধের সময় এসে আমরা দালালরাই ঠিককরার জন্য বলেছি। আমাদের ছাড়াঅফিস টাকা কামাতে পারেনা। মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো: নাজমুল ইসলাম জানান, দালালদের মাধ্যমে ফাইল জমা দেয় না কেউ। তবে অফিসের স্টাফরা যদি সেবা গ্রহিতার সাথে অন্যায় করে থাকে তবে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকার একজন সাংবাদিককে বারংবার তিনি অফিসে এসে তার সাথে দেখা করে যেতে বলেন। মুন্সীগঞ্জের সকল সাংবাদিকদের চোখে দুলো দিয়ে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করে যাচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করে ২০০ দালালের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে এমনটিই আশা করেন ভূক্তভোগী সেবা নিতে আসা সকল গ্রাহক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com