প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটা ধারণা বা মানসিকতা আছে যে আমরা অন্যের টাকা ছাড়া কিছু করতে পারি না। আমাদের মানসিকতার এই দৈনতাটা ছিল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
যারা পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনামূলক নানা কথা বলেছেন, সেসবের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই সব বক্তব্যে জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনার দায়ভার তাদের কাঁধেই অর্পণ করেন। এখানে তাঁর কারো বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ নেই উল্লেখ করে বরং তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন্যবাদ জানাই এই কারণে-কেননা এই ঘটনা ঘটেছিল বলেই আজকে সাহস নিয়ে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের অনেকেরই একটা মানসিকতা ছিল যে আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই পরনির্ভরশীলতা এবং পরমুখাপেক্ষিতাই আমাদের মাঝে ছিল, একটা দীনতা ছিল। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রচলিত প্রবাদের উল্লেখ করে বলেন, ‘নিজের ভার ভাল না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কি?’
তিনি বলেন, বিশ^ ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন যে বন্ধ করেছিল সেটাতো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ^ ব্যাংক তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়ার পরে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই অচলায়তন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি, এতেই আমি খুশী।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ বা এর কাজের গুণগত মান নিয়ে কোন আপোষ করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশে^র সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২৫ তারিখে আমরা পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবো, আমি দেশবাসী সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কেননা, তাদের সাহসে সাহসী হয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উৎসব সবাই করবেন কিন্তু প্রত্যেকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করবেন এবং নিয়ম মানবেন এবং কোথাও কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন।
তিনি বলেন, যার যার জায়গা থেকে যেমন ভাবে হোক এই উৎসবে সবাই সামিল হবেন-এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি কাজেই সেভাবেই সবাই উৎসবে সামিল হবেন।
তিনি এ সময় সকলের মঙ্গল কামনা করে সকলের দোয়া চান বাংলাদেশ যাতে বিশে^ এভাবেই মাথা উঁচু করে চলতে পারে।
সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে:
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তরিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। গতকাল বুধবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবে এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীনে হবে। আইন অনুযায়ী কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করে। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সহায়তা করে। স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব। আশা করি সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠন, ইভিএম চালু, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘেœ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেগা প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ কোনো প্রভাবের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ/অনুদান সহায়তায় গ্রহণ করা হলেও এসব ঋণ নমনীয় প্রকৃতির। সুদের হার তুলনামূলক কম ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এবং গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি বলেও জানান সংসদ নেতা।