প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা মহাসড়ক এখন হুমকির মুখে। দিনদিন পদ্মা নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল এলাকার মোসলেমপুর, টিকটিকি পাড়া ও মুন্সিপাড়ায় পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর থেকে মুন্সীপাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন বাড়িঘর ভাঙনে হুমকির মধ্যে। ভাঙন থেকে মাত্র দুইশত মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। অপর দিকে বহলবাড়ীয়া ও তালবাড়ীয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ একর ফসলি জমি। ভেড়ামারার ১২ মাইল এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ হাফিজুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ইতিপূর্বে আউশ ধান, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, করলাসহ সবজির মাঠ নদীতে ভেঙে গেছে। ভাঙনে ১৫০ একর জমি নদীতে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগেও ভেঙেছে। এখন বাড়িঘর ভাঙনের মুখে। নদী এখন দুই শত মিটার দুরে রয়েছে। রোধ করা না হলে সব নদী গর্ভে চলে যাব আমরা ভিটা ছাড়া হব। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। প্রতিবছরই নদীতে চলে যাচ্ছে ফসলি জামি। এবার বসত বাড়ির নিকট চলে এসেছে। ভেড়ামারার ৬ হাজার পরিবার এখন হুমকির মুখে। ভেড়ামারা বাহিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশন আরা সিদ্দীক বলেন, গত বছর নদী ভাঙ্গনের সময় থেকেই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতৃপক্ষের নিকট জানিয়েছিলাম। তারা ব্যবস্থাগ্রহণের কথা জানিয়েও কোন পদক্ষেপ নেননি। এইবারও আমরা তাদের জানিয়েছি তারা আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু এখনো কোন কাজ করেনি। এই নদী ভাঙ্গনের ফলে সাধারণ জনগণ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাসদ নেতা আব্দুল আলিম স্বপন বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমাদের ভেড়ামারা-মিরপুর আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শন করে সার্ভে করে গেছেন। পদ্মা থেকে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান তিনি। আবু হাসান বলেন, ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর এলাকা থেকে শুরু করে টিকটিকি পাড়া ও মুন্সি পাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জুড়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ পরিবারের প্রায় ৫শত একর জমি ভাঙনে নদীর বুকে চলে গেছে। গত সাত দিনে ১৫০ একর জমির আউশ ধান, কলা, পেঁয়াজ, রসুন করোলা সবজিসহ ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। বহলবাড়ীয়া ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা হাসান বলেন, পদ্মা নদীতে ধারে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই নদীর পাড় ৬০ থেকে ৭০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এর সঙ্গে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। পদ্মার ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। তালবাড়ীয়া এলাকার হাবিব জানান, তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া গ্রামে ভয়াবহ পদ্মা নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাগর মুন্সির বাধ নামক স্থান এবং বারুইপাড়া ইউনিয়নের শিমুলতলা নামক স্থান ও তালবাড়িয়া ইউনিয়নের সব থেকে বেশি যে জায়গা ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদী ভাঙনের ফলে শত শত বাড়িঘরসহ ফসলী মাঠ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ৬০ থেকে ৭০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদীগর্ভে গেছে অনেকের বসতবাড়ি ও জমি। হুমকিতে রয়েছে আরও শত শত বিঘা ফসলি জমি, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা মহাসড়কসহ হাজারও বসতবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সার্ভে করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও ভাঙন কবলিত এলাকা নিয়ে স্টাডি চলছে।