নিয়ত শব্দের অর্থ হচ্ছে- ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প। আরেক অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের ইচ্ছায় কোনো কাজের দিকে মনোনিবেশ করা। আবার মনের দ্বারা কোনো জিনিসের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করা ও নিজের দ্বারা এর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়াকেও নিয়ত বলে। কেউ কেউ এভাবেও বলেন, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনো উপকার লাভ বা কোনো ক্ষতির প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অনুকূল কাজ করার জন্য মনের উদ্যোগ উদ্বোধনকেই নিয়ত বলে। পবিত্র কুরআনে নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে। আমি তাকে দুনিয়াতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করব, অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করব, এতে সে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরকালেরও নিয়ত রাখবে ও এর জন্য যেমন চেষ্টা প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে। যদি সে মুমিন হয় এরূপ লোকদের চেষ্টা কবুল হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১৮-১৯) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলে দাও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’(সূরা বনি ইসরাইল-৮৪) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে পরকালীন ফসল চায়, তার ফসল আমি বৃদ্ধি করি। আর যে দুনিয়ার ফসল চায়, তাকে দুনিয়া থেকেই দান করি। কিন্তু পরকালে তার কিছুই প্রাপ্য হবে না।’ (সূরা আল-শুরা-২০)
এভাবে হাদিসের মধ্যেও বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত উমর রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রতিটি লোক (পরকালে) তাই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যেই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোনো স্বার্থ উদ্ধারের নিয়তে হিজরত করে, মূলত তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে।’ (বুখারি, মুসলিম) অন্যত্র হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবী করিম সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ করেন না, বরং তোমাদের অন্তকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ করেন।’ (মুসলিম)
আমাদের সামনে এক মহান ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের সুযোগ আসছে। তা হলো, পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদুল আজহায় কোরবানি করার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- নিয়ত। এই নিয়ত ঠিক না থাকলে কোরবানি করে কোনো লাভ হবে না। তাই আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো- নিয়তকে ঠিক করা, পরিশুদ্ধ করা, খালেছ করা। কারণ, আমাদের এই কোরবানি শুধু পশুকে জবাই করা নয়। বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করা। দেহমনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করা। আর এই কোরবানিও কবুল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির নিয়ত, ভাবনা ও মানসিকতার ওপর। তাই নিজেকে তাকওয়াবান, মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এই কোরবানির ঈদ- কোরবানি।
অতএব, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানি করার আগেই আমাদের নিয়তকে ঠিক করা ও পরিশুদ্ধ করা উচিত। আর নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সব স্তরে আল্লাহর ভয়, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের সাধনাকে প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানানো উচিত। এই কোরবানির ঈদের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে তার শিক্ষা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটুক এবং এই ঈদের শুভাগমনে আমাদের পৃথিবীও হোক সুন্দর, হেসে উঠুক সব কিছু আনন্দ-উল্লাসে। এটাই আমাদের কামনা ও প্রত্যাশা। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল