সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, নির্বাচনে ভোট চুরি নয়, ভোট ডাকাতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার মিলেমিশে এ ডাকাতি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এতে জনগণ ভোট দিতে পারবে না- সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তাই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বুধবার দুপুরে নির্বাচন পরবর্তী সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনটি আয়োজন করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের কথায় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীর ওপর গুলি করা হয়েছে, এজেন্টদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে করে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা নীরব থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, খুলনায় ২২ হাজার ভোট বেশি গণনা হওয়ার খবর প্রকাশকে কেন্দ্র করে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমি কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ৯০ শতাংশ এলাকায় নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশ ব্যালট বাক্স ভরাট করেছে, এজেন্টদের গুলি করার ভয় দেখিয়েছে, গ্রেফতার করেছে। এমনকি ভোটের পূর্ব মুহূর্তে এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আইনজীবীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগ সবসময় শক্তিশালী ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিচার বিভাগের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিচারপতিরা শপথ নিয়েছেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্ত আমরা দেখেছি কোনো কোনো বিচারপতি বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নিজেদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাই তাদের পদত্যাগ করা দরকার।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন যেহেতু জাতি গ্রহণ করেনি তাই এ নির্বাচন বাতিল করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে সুপ্রিমকোর্ট দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদের সুপ্রিমকোর্ট নীরব থাকতে পারে না। আমি আশা করি এক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট তার দায়িত্ব পালন করবে। এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের পরাজয় হয়েছে। স্বৈরাচারের জয় হয়েছে।
সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যমুনা টেলিভিশনের ক্যাবল সম্প্রচার বন্ধ এবং খুলনায় দুজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হওয়ার ঘটনা নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা প্রমাণ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমি নিজেও প্রার্থী ছিলাম। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এটি ছিল নির্বাচনের নামে প্রতারণা। নির্বাচন কমিশন ও সরকার যৌথভাবে জনগণ, সংবিধান, গণতন্ত্র, বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতারণা করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহসভাপতি ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন, সদস্য মাহফুজ বিন ইউসুফ, মো. আহসান উল্লাহ, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য আইয়ুব আলী আশ্রাফী প্রমুখ।
খবরপত্র/এমআই