বাঁচানো গেলো না জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে। গতকাল শুক্রবার (৮ জুলাই) বন্দুকধারীর গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মারা গেছেন তিনি। জাপানের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে জানানো হয়, দেশটির নারা শহরে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি হঠাৎ পড়ে যান ও আহত হন। সে সময় এনএইচকে’র এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে বন্দুকের গুলি ছোড়ার মতো শব্দ শুনেছেন ও আবেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছেন। জাপানের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচারমাধ্যম জানায়, নারায় এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় শিনজো আবের বুকে সম্ভবত গুলি করা হয়। এতে তিনি অজ্ঞান হওয়ার পর কারও ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন না। এরপর ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন এক যুবককে আটক ও একটি বন্দুক উদ্ধার করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আবেকে বাঁচাতে সাড়ে চার ঘণ্টার প্রাণপণ চেষ্টা: জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে বাঁচাতে সাড়ে চার ঘণ্টা প্রাণপণ চেষ্টা করেন দেশটির চিকিৎসকরা। কিন্তু তারপরও তাকে বাঁচানো যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চিকিৎসকরা প্রথম থেকেই আবের রক্তক্ষরণ বন্ধের চেষ্টা চালায়। এ সময় ১০০ ইউনিটের বেশি রক্ত ব্যবহার করে সঞ্চালন ঠিক রাখা হচ্ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, আবের শরীরের দুই জায়গায় ক্ষত পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এগুলো বুলেটের ক্ষত চিহ্ন। তবে অপারেশনের সময় তার শরীরে কোনো বুলেট পাওয়া যায়নি। শুক্রবার (৮ জুলাই) বন্দুকধারীর গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মারা গেছেন তিনি। এর আগে জানানো হয়, দেশটির নারা শহরে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি হঠাৎ পড়ে যান ও আহত হন। সে সময় এনএইচকে’র এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে বন্দুকের গুলি ছোড়ার মতো শব্দ শুনেছেন ও আবেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছেন। শিনজো আবের বর্ণাঢ্য জীবন: এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হলো জাপানবাসী। দেশটির সাবেক দুইবারের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হলো। চিকিৎসকদের সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায়ও তাকে বাঁচানো যায়নি। দেশে-বিদেশে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন।
জানা গেছে, ১৯৫৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক সম্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন আবে। তার দাদা ও চাচাও জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া তার বাবা ছিলেন ডানপন্থি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) সাবেক মহাসচিব। আবে টোকিওর সেইকি ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তবে ১৯৭৯ সালে তিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। এর তিন বছর পর তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি প্রথম ১৯৯৩ সালে জাপানের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৮ বছর। ২০০০ সালে তিনি বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালন করেন ও ২০০৩ সালে এলডিপির মহাসচিব হন। এর চার বছর পর আবে দলটির প্রেসিডেন্ট হন। এরপরই জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন।
তার প্রথম মেয়াদে স্বাস্থ্যখাতে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়। ২০০৭ সালে তিনি দল ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। এরপর পাঁচ বছরে বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। সবশেষ ২০২০ সালে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। গতকাল শুক্রবার (৮ জুলাই) বন্দুকধারীর গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মারা গেছেন ৬৭ বছর বয়সী এ জাপানি রাজনীতিবিদ।
অসন্তুষ্টি থেকে আবেকে হত্যা করা হয়েছে
অসন্তুষ্টি থেকে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হামলাকারী আগে থেকেই আবেকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। জাপানের পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এমন খবর প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহরে রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবেকে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরে সেখানেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় জাপানের পুলিশ তাৎসুইয়া ইয়ামাগামি নামের ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। হামলাকারী জাপানের সাবেক নৌসেনা (জাপানিজ মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্স)। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি একটি অস্ত্র দিয়ে তিনি শিনজো আবেকে গুলি করেন। আটকের পর তাঁর অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হামলার সময় তাঁর পরনে ধূসর রঙের টি–শার্ট ও ট্রাউজার ছিল।
ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিনজো আবের গলা থেকে রক্তপাত হয়। জাপানে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবে। তিনি দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) ওপর তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। শুক্রবার সকালে উড়োজাহাজে ওসাকা পৌঁছে সেখান থেকে নারা শহরে যান আবে। নারা শহরের ইয়ামাতো সাইদাইজি স্টেশনের সামনে জনতার উদ্দেশে ভাষণ শুরু করার মিনিটের কম সময়ের মধ্যে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।